সাকিবের বিরুদ্ধে ফের তোপ দাগলেন আসিফ, ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যে বিতর্ক

আসিফ মাহমুদ ও সাকিব আল হাসান
আসিফ মাহমুদ ও সাকিব আল হাসান   © সংগৃহীত

ক্রীড়াপ্রেমীদের অধিকাংশই তখন এশিয়া কাপ ফাইনালে বুঁদ হয়েছিলেন। তবে, ভারত-পাকিস্তানের ফাইনাল প্রত্যাশিত উত্তাপ না ছড়াতে পারলেও, অন্য এক উত্তেজনার পারদে মেতেছিলেন লাল-সবুজের ক্রীড়াপ্রেমীরা। যদিও সে সময়ে কেউই কারোর নাম উল্লেখ করে মাঠের বাইরের অদ্ভুদ সেই খেলায় নৈপুণ্য দেখাননি। তবুও, ক্রীড়ামোদীদের বুঝতে বাকি ছিল না, কে কাকে ইঙ্গিত করেছেন। 

মূলত রবিবার রাত ৮টা ৫২ মিনিটে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে তার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। শেখ হাসিনার সঙ্গে পুরোনো একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে সাকিব লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন আপা’।

এরপর রাত ১০টার দিকে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। যেখানে তিনি লেখেন, ‘একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। বাট আই ওয়াজ রাইট। অ্যান্ড অব দ্য ডিসকাশন।’

তবে একজনটা সম্পর্কে সে সময়ে কিছুই উল্লেখ করেননি ক্রীড়া উপদেষ্টা। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ব্যক্তিদের বুঝতে বাকি নেই, সাকিবকেই ইঙ্গিত করেছেন আসিফ। নেপথ্যে, শেখ হাসিনার জন্মদিনে সাকিবের শুভেচ্ছা।

তবে ফেসবুকে অঙ্গনে অদ্ভুত এই খেলার শুরুটা এখানেই না, এজন্য আরও পেছনে ফিরতে হবে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে তার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।

অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন সাকিব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। অবশ্য, ছাত্র আন্দোলনের সময়টায় কানাডায় ছিলেন সাকিব। এরপর আর দেশে ফেরা হয়নি তার।

যদিও ৫ আগস্ট সরকার বিদায়ের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সাকিবের মাথায় হত্যা মামলার খড়্গ ঝুলছে। তার বিরুদ্ধে শেয়ার কেলেঙ্কারির পাশাপাশি দুদকের মামলাও আছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট দিয়ে ঘরের মাঠে নিজের দীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অধ্যায়টা শেষ করতে চেয়েছিলেন সাকিব। এজন্য, আমেরিকা থেকে দেশের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত সময়ে রওনাও করেছিলেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে গ্রিন সিগন্যাল না মেলায় দেশে ফেরা একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায় সাকিবের। ধারণা করা হয়েছিল, এর পেছনে বড় ভূমিকা ছিল ক্রীড়া উপদেষ্টার।

সেই ধারণা, রবিবার আসিফের স্ট্যাটাসে আরও স্পষ্ট হয়। একইদিন রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে পাল্টা স্ট্যাটাসে সাকিবও তেমনটাই বুঝিয়েছেন। যদিও এখনও প্রিয় মাতৃভূমিতে ফেরার আশা ছাড়ছেন না সাবেক বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। সাকিব বলছিলেন, ‘ফিরব হয়তো কোনো দিন আপন মাতৃভূমিতে, ভালোবাসি বাংলাদেশ।’

এবার আরও একবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাকিব-আসিফের স্নায়ুযুদ্ধ। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর সাকিবকে পাল্টা জবাব দিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। যদিও নিজের পোস্টে সাকিবকে একপ্রকার ব্যঙ্গই করলেন আসিফ। সাকিবকে এ-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দিনশেষে আইন সবার জন্যই সমান। আর ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত কারোর হাতে লাল-সবুজের পতাকা কোনোভাবেই কল্পনা করেন না ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক।

ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘ভাইয়া, আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। আমি শুধু নির্বাচনটাই করেছিলাম, আওয়ামিলীগের দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হইনি।’ 

উপদেষ্টা এ-ও লেখেন, ‘You know who. যার হাত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। বোর্ডের কর্তারা একাধিকবার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে বললেও তা না করে বরং খুনিদের এনডোর্স করা ছাড়াও শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, মানি লন্ডারিং, ফাইনানশিয়াল ফ্রড করা কাউকে কেন শুধু ভালো ক্রিকেটার বলেই পুনর্বাসন করতে হবে? আইন সবার জন্য সমান, Face it.’


সর্বশেষ সংবাদ