সেন্ট গ্রেগরিজ থেকে নটরডেম, ৭৩ বছরে পা দিল দেশসেরা কলেজটি

নটরডেম কলেজের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
নটরডেম কলেজের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ  © ফাইল ছবি

আজ ৩ নভেম্বর। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নটরডেম কলেজের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এই দিনে ১৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে যাত্রা শুরু হয় নটরডেম কলেজের সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুল নামে। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে ঢাকার মতিঝিলে বড় পরিসরে নতুন ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করে মিশনারী এই  প্রতিষ্ঠানটি।

জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান গঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) গঠিত হলে শিক্ষা বিস্তারে তৎকালীন সরকার ক্যাথলিক চার্চের প্রধানকে কয়েকটি কলেজ স্থাপনের অনুরোধ জানান। সরকারের এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তানের ক্যাথলিক চার্চের প্রদান আর্চবিশপ লরেন্স গ্রেনার ছেলেদের জন্য কলেজ স্থাপনের নির্দেশ দেন হলি ক্রস সন্ন্যাস সংঘের যাজক ও সিস্টারদেরকে। সে নির্দেশের প্রেক্ষিতে ১৯৪৯ সালে লক্ষ্মীবাজারে সেন্ট গ্রেগরিজ কলেজ নামে সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুলে ক্লাস শুরু করে।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, “১৯৪৯ সালে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে হলিক্রস ফাদারগণ কর্তৃক ‘সেন্ট গ্রেগরি কলেজ’ নামে প্রথমে ক্যাথলিক কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৫০ সালে ৬১/১ সুভাষবোস এভিনিউর একটি ভবনে কলেজটি স্থানান্তরিত হয় এবং একটি পূর্ণাঙ্গ কলেজ হিসেবে কাজ শুরু করে। ১৯৫৪ সালে এটি মতিঝিলের বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয় এবং মা মেরির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় নটর ডেম কলেজ। পবিত্র ক্রুশ সন্ন্যাস সংঘের ফাদারদের নীতি ও আদর্শ দ্বারা কলেজটি পরিচালিত হয়।”

শুরুতে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থাকলেও ১৯৫৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়েছিল। শুরু থেকেই বোর্ড ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষায় সাফল্য পায় এখানকার শিক্ষার্থীরা। সাফল্যের অগ্রযাত্রায় পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের হলিক্রস সন্ন্যাস সংঘের যাজকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে।

নটরডেম কলেজ ব্যবহারিক নির্ভর মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষায় যুগের চাহিদা ও সময়োপযোগী মানুষ তৈরির ব্রত পালন করছে নিষ্ঠার সাথেই। আদিবাসী, সংখ্যালঘু, খ্রিস্টান ও মুসলিম শিক্ষার্থীদের নিয়ে বর্তমানে কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার ৫০০। মিশনারী কলেজ হলেও এখানকার অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মুসলিম, শতাংশের হিসেবে যা ৮৫ শতাংশ।

প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ১৩টি বিভাগের অধীনে রয়েছেন মোট ৯১ জন শিক্ষক। কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও, সিএসসি। সুনির্দিষ্ট বাঁচাই ও ভর্তি পরীক্ষা,  নিয়মিত কুইজ ও পরীক্ষা, ছাত্র-শিক্ষক সুসম্পর্ক ও শৃঙ্খলিত নিয়মশৃঙ্খলার প্রতিপালনের ফলে প্রতিষ্ঠানটি অন্যদের থেকে আলাদা হতে পেরেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞান বিভাগের ১৪টি বাংলা ও ২টি ইংরেজি,  মানবিক শাখায় ৩টি ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৬টি সহ মোট ২৫টি গ্রুপে শিক্ষাদান করা হয় এখানে। শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল ও নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পন্ন করতে নটরডেম কলেজে পরিচালক হচ্ছে ২৪টি ক্লাব।

এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম ডিবেটিং (বিতর্ক) ক্লাব নটরডেম ডিবেটিং ক্লাব। যাকে বলা হয় ‘ফাদার অব ডিবেটিং’ ক্লাব (Father of debating). এছাড়াও, বিজ্ঞান ক্লাব, গণিত ক্লাব, ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এন্ড রিলেশন ক্লাব, ইংলিশ ক্লাব, চেজ ক্লাব, আইটি ক্লাব ইত্যাদি।

কলেজের বার্ষিক প্রকাশনা ‘ব্লু অ্যান্ড গোল্ড’, দ্বি-মাসিক প্রকাশনা ‘ঢাক-ঢোল’, যা শিক্ষার্থীদের কলেজ জীবন ও তৎসংশ্লিষ্ট ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে। নটরডেম কলেজের রয়েছে সামাজিক শিক্ষা কার্যক্রম, যেখানে সুবিধবঞ্চিত শিশু শিক্ষার্থীরা ১ম থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা খরচে পড়তে পারে ‘নটরডেম লিটারেসি স্কুল’ এ। আর উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ‘কাজের বিনিময়ে পড়াশোনা’ করার মতো সামাজিক শিক্ষা কার্যক্রম।

কলেজটির কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী, সংবিধান প্রণেতা ও রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান,  সালমান এফ রহমান, মাহফুজ আনাম, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, হাসানুল হক ইনু, গোলাম দস্তগীর গাজী, জাহিদ মালেক, সমশের মুবিন চৌধুরী, ড. মুরাদ হাসান, তাহসান রহমান খান, ওয়াহিদ ইবনে রেজাসহ আরও অনেকে।

নটরডেম কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও, সিএসসি বলেন, আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের ফলেই নটরডেম কলেজের এতো সাফল্য।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন,  এখানকার সকল শিক্ষার্থীরা আর্ত-মানবতার সেবায় কাজ করবে। অধ্যক্ষ বলেন,  আগামীতে আরও বেশি সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে চায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি একটি অডিটোরিয়াম ও হ্যারিটেজ ভবন করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।  

একইসঙ্গে শিক্ষকদের আরও বেশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার কথা বলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের কোন সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের আগামীতে আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান। আর ৭৫ বছরে গোল্ডেন জুবিলী উদযাপনের ধীর প্রস্তুতির কথাও বলেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence