করোনা সংকট

নাজেহাল দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

দুশ্চিন্তাগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীতে নাজেহাল হয়ে পড়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাব্যবস্থা। গতবছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নতুন বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনার্স প্রথম বর্ষে কোন শিক্ষার্থী এখনও ভর্তি করানো সম্ভব হয়নি। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে কোন শিক্ষার্থী নেই। তেমনিভাবে স্কুল কলেজগুলোতেও চলছে শিক্ষার্থীদের হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় ক্লাস করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। সরাসরি স্কুলে পাঠদান সম্পন্ন না হওয়ার কারণে মৌলিক শিক্ষা থেকে অনেক পিছিয়েছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বিশেষ কোন লাভ হচ্ছেনা বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী এবং ৫০ লাখ শিক্ষক। গত প্রায় পনের মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অনলাইনে এবং সংসদ টেলিভিশন ও বেতারে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু এ উদ্যোগ শতভাগ কার্যকর হচ্ছে না বলে কয়েকটি জরিপে উঠে এসেছে। গণসাক্ষরতা অভিযানের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ও দূরশিক্ষণ বা বেতার, টেলিভিশন, অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেওয়া পাঠদানের আওতায় এসেছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৯২ শতাংশ আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনের পাঠদানের আওতায় এসেছে।

করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন নিয়মিত পড়াশোনার বাইরে রয়েছে প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। যারফলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের চিন্তার শেষ নেই। পড়াশোনায় মনোযোগ হারানো, শিক্ষার খরচ তুলনামূলক বেড়ে যাওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা এবং শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা নিয়েও হতাশ এই অভিভাবকেরা বলে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে। এছাড়াও, শহুরে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে থাকতে নানা মানসিক সংকটের মুখোমুখি নিয়েও উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।

এদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে দেশের বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সকল ধরণের আয়ের পথ বন্ধ তাদের। এতে করে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন দিতে পারছেন না তারা। ফলে অনেক স্কুল কলেজ এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ দেশের একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, করোনায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে হয় এবং শিখন-শেখানো কার্যক্রম থেকে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সবকিছু ক্লাসেই শেষ করা হয়। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বেশি পাঠের সময় পায়না বা অভিভাবকদের পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠে না।  তিনি বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, দ্বিতীয় শ্রেণিতে তিনটি বইয়ের ওপর সরাসরি ক্লাস করতে না পারায় বুক রিডিং ও রাইটিংয়ে তারা প্রয়োজনীয় শিখনফল অর্জন করতে পারেনি। ফলে তৃতীয় শ্রেণিতে উঠে তাদের জন্য ৬-৭টি বই পড়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করা কষ্টকর হয়ে উঠছে। বিদ্যালয় খোলার পর এই শিশুদের রিডিং দক্ষতা অর্জন করাতে অনেক কষ্ট হবে। অনেকে বিদ্যালয়ে আসতে চাইবে না। এতে ঝরে পড়ার হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

করোনায় দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষতিও কম নয়। বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী শ্রেণিতে উঠেছে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা। ফলে গত বছরের ক্লাসের দক্ষতা ঘাটতি তাদের রয়েই গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন বছরে নতুন ক্লাসের পড়াশোনা। সামর্থবান অভিভাবকেরা গৃহশিক্ষক দিয়ে তাদের সন্তানদের বাড়িতে পড়াশোনা চালালেও নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র অসংখ্য অভিভাবকের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না।  

এদিকে, গত বছর এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও এক দিনও ক্লাসে বসতে পারেনি। করোনায় গত বছরের এইচএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়। ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা কবে নেওয়া সম্ভব হবে কেউ জানে না।

উচ্চশিক্ষা স্তরে করোনার এই ভয়াল থাবা শিক্ষার্থীদের বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সেশনজটে প্রায় দিশেহারা তারা।  বয়স পার হলেও শেষ হচ্ছে না অনার্স বা মাস্টার্স। এতে কর্মসংস্থানের চিন্তা এখন প্রতিটি উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।  

আরও দেখুন: চাকরির সব দরজা বন্ধ, বয়স শেষ—বেকাররা যাবেন কোথায়?

প্রায় ২৯ লাখ ছাত্রছাত্রী নিয়ে পরিচালিত দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরও ভয়াবহ। সারাদেশের দুই হাজার ২৬৮টি কলেজের উচ্চশিক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এ প্রতিষ্ঠান নিতে পারছে না পরীক্ষা। করোনা শুরুর পর থেকে এপর্যন্ত কোন পরীক্ষা নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালের পরীক্ষাগুলো শেষ হলেও মৌখিক পরীক্ষা বাকি রয়েছে। আগামী ২৪ মে থেকে অনলাইন মৌখিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা।

এবিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বদরুজ্জামান জানান, সব মিলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০টি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা মাস্টার্স ফাইনাল ও ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষ। মাস্টার্স ফাইনালে এক লাখ ৩০ হাজার ও ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষে এক লাখ ৯০ হাজার পরীক্ষার্থী রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence