আয়াসহ ৪ পদে নিয়োগ
সংবাদ না করার জন্য কত টাকা দিতে হবে—সাংবাদিককে অধ্যক্ষ
- রংপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৭ PM
পছন্দের প্রার্থীদের গোপনে নিয়োগ দিয়ে কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে তারাগঞ্জ ও/এ কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তিনি। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদের হেনস্তা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে ফোনে ডেকে আনেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ৯ ডিসেম্বর বেলা ১টায় অধ্যক্ষের কক্ষে এ ঘটনা সংঘটিত হয়।
স্থানীয় সাংবাদিক মহল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
দৈনিক কালবেলার তারাগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি লাতিফুল সাফি ডায়মন্ড ও ভোরের দর্পণ পত্রিকার তারাগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি আরিফ শেখ তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অধ্যক্ষের অফিসকক্ষে প্রবেশ করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে কক্ষের ভেতরে উপস্থিত ছিলেন কুর্শা ইউনিয়নের সাবেক কাজি শাহা।
অধ্যক্ষ এস এম আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারাগঞ্জ ও/এ কামিল মাদ্রাসায় নৈশপ্রহরী, আয়াসহ চারটি পদে টাকার বিনিময়ে পছন্দের প্রার্থীদের চাকরি দিতে গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাংবাদিকরা গত ছয় মাসে প্রতিষ্ঠানে কোনো নিয়োগ কার্যক্রম চলমান আছে কি না, কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে কি না—এমন নিয়মবহির্ভূত বা গোপন নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ এস এম আব্দুস সালাম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘আমি কি চুরি করছি? কেন আপনারা সংবাদ করবেন? কত টাকা দিতে হবে সংবাদ না করার জন্য?’
সাংবাদিকদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ উত্তেজিত হয়ে বারবার রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন এবং সাংবাদিকদের ‘ধরে নেওয়ার’ আহ্বান জানান। কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষকসহ স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীরা এসে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলেন এবং মব তৈরির চেষ্টা করেন।
এ সময় সাংবাদিকরা নিরাপত্তার স্বার্থে অডিও ও ভিডিও রেকর্ড চালু করেন। দাবি করা হচ্ছে, রেকর্ডিং শুরু হওয়ার পরও অধ্যক্ষ অপমানজনক ভাষায় কথা বলতে থাকেন এবং অর্থের বিনিময়ে সংবাদ বন্ধের অনৈতিক প্রস্তাব দেন।
সাংবাদিক আরিফ শেখ বলেন, ‘আমরা নিয়মানুযায়ী তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু অধ্যক্ষ আমাদের অপমান, ভয়ভীতি ও হেনস্তার চেষ্টা করেছেন। এমনকি স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ডেকে মব তৈরির চেষ্টা করেন। বিষয়টি ন্যায়বিচারের স্বার্থে তদন্ত হওয়া জরুরি।’
সাংবাদিকদের লাতিফুল সাফি ডায়মন্ড বলেন, প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা রয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠিত হলে তারা অডিও-ভিডিও প্রমাণ জমা দেবেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অধ্যক্ষ এস এম আব্দুস সালামের মুঠোফোনে কল করে হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনে, পরে কথা হবে বলে মুঠোফোন কেটে দেন।
তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোনাব্বর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তারাগঞ্জ ও/এ কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্থানীয় দুজন সাংবাদিককে হেনস্তা করার যে অভিযোগের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। ওই মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমি নই। সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে আছেন একজন এডিসি স্যার। আমি অভিযোগকারীদের সভাপতির কাছে আবেদন করতে বলেছি। আশা করি তিনি বিষয়টি দেখবেন এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
জানতে চাইলে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শরীফুল আলম বলেন, ‘আয়া, নৈশপ্রহরীসহ চার পদে ওই মাদ্রাসায় নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। এ জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। তথ্য গোপন করার তো কোনো কারণ নেই। অধ্যক্ষ কেন এমন করলেন, ওনার সঙ্গে কথা বলব। ’