মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ বছর ধরে বন্ধ সিজারিয়ান অপারেশন
- মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৩ PM
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি ও এনেস্থেসিয়া চিকিৎসকের অভাবে ১৪ বছর ধরে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। ৫০ শয্যার সরকারি হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটার আধুনিক ভবনে স্থানান্তরিত হলেও কার্যত অচল অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে উপজেলার হাজারো গর্ভবতী নারীকে এখনও প্রসবের জন্য প্রাইভেট হাসপাতাল কিংবা ধাত্রীনির্ভর ডেলিভারির ওপর ভরসা করতে হচ্ছে।
উপজেলার ৩১ শয্যার সরকারি হাসপাতালটি ২০০৮ সালে মরাদোন এলাকায় নির্মিত হয়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করার অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হলেও, কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি। অপারেশন থিয়েটারটি পুরনো ভবন থেকে নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হলেও সেটি কোনো কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে না।
চরাঞ্চলসমৃদ্ধ গ্রামীণ এই উপজেলার অসংখ্য গর্ভবতী নারী এখনো প্রসবের জন্য দাই বা ধাত্রীর উপর নির্ভরশীল।
উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ১৬ বছরের পুরনো এই সরকারি হাসপাতালে ১৪ বছর গাইনি চিকিৎসক ও এনেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ না থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এখানে বর্তমানে নেই জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেস্থেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) এবং পর্যাপ্ত মেডিকেল অফিসার। নিয়োগপ্রাপ্ত দুজন চিকিৎসক ডেপুটেশনে চলে গেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর খাঁনপুর হাসপাতালে।
উপজেলার ছেংগারচর বাজারের এক ফার্মেসির কর্মচারী বলেন, অনেকে না জেনে প্রসূতি মাকে ডেলিভারির জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসে। কিন্তু এখানে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আবার অন্যত্র নিতে হয়। রাস্তাঘাটের খারাপ অবস্থার কারণে রোগীর স্বজনদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
ঘাসিরচর এলাকার আলী হোসেন বলেন, ‘আমার বোনের প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে কষ্ট করে উপজেলা হাসপাতালে আনি, কিন্তু তারা জানায় এখানে কোনো ব্যবস্থা নেই। পরে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে সিজার করাই।’
কলাকান্দা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কাদির মোল্লা বলেন, ‘প্রসূতি মায়েরা এই উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সবিমুখ। কেননা, এখানে গাইনী ডাক্তার নেই। তাই অপারেশন হয় না। অথচ দরিদ্র মায়েদের জন্যই এই সরকারি হাসপাতাল। এখানে গাইনি ডাক্তার থাকলে আমার এলাকার হানিরপাড়ের দরিদ্র মা তামান্নাকে ছেংগারচর প্রাইভেট হাসপাতালে সিজার করিয়ে সন্তান বিক্রি করে হাসপাতালের বিল মেটাতে হতো না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার ব্যবহার না হওয়ার বিষয়ে কথা হলে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এখানে অপারেশন বন্ধ রয়েছে এ কথা সত্য। একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি এখানে ছিলেন। পরে তিনি ডেপুটেশনে চলে যাওয়ার কারণে আমরা দীর্ঘদিন বিপাকে। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন গাইনি চিকিৎসক আনার জন্য আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েছি।’