ময়মনসিংহে মাদ্রাসায় দুই পক্ষের মারামারি, ডিসির প্রত্যাহার দাবি

মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের একাংশ বিক্ষোভ করছে
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের একাংশ বিক্ষোভ করছে  © টিডিসি

ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ফয়জুর রহমান বড় মসজিদ মাদ্রাসায় দুই পক্ষের মারামারির জেরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাংশ মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. মুফিদুল আলম ও মাদ্রাসা কমিটির পক্ষপাতমূলক আচরণকে দায়ী করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মাদ্রাসায়  ছাত্র-শিক্ষকদের দুটি পক্ষের বৈঠকের পর হঠাৎ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষের মারামারিতে মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মো. শহীদুল্লাহ আহত হন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মুফতি মো. সারোয়ার হোসেন জানান, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ শহীদুল্লাহকে একটি পক্ষ প্রভাব খাটিয়ে মাদ্রাসায় প্রবেশ করালে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা চড়াও হলে তিনি আহত হন। 

ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম সোমবার রাত ১১টায় এক বিজ্ঞপ্তিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাদ্রাসা ছুটি ঘোষণা করেন।

তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রশাসনের এ আদেশ অমান্য করে মাদ্রাসার কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। গত সোমবার রাতে শিক্ষক পরিষদের জরুরি বৈঠকেও ডিসির জারি করা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার নির্দেশ স্থগিত করে ক্লাস চালু রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য ডিসির পক্ষপাতমূলক আচরণকে দায়ী করেন। মিশকাত বিভাগের শিক্ষার্থী আজিজুল হক মুয়াজ দাবি করেন, ডিসি ছাত্রদের সঙ্গে কথা বললে এই বিশৃঙ্খলা হতো না।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি উপস্থাপন করেন। তাদের প্রধান দাবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। বাকি তিনটি দাবি হলো– জামিয়ার হিফজ বিভাগের প্রধান শিক্ষক হাফেজ শহীদুল্লাহকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র দিতে হবে। কওমি আলেম-উলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সমন্বয়ে নতুন মাদ্রাসা কমিটি গঠন করতে হবে। হাফেজ শহীদুল্লাহর ছেলে আম্মান ও মাহমুদুলকে বহিরাগতদের সহায়তায় ছাত্রদের ওপর হামলার অভিযোগে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিবিরুল ইসলাম জানান, মাদ্রাসার দুটি পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং পরিস্থিতি সমাধানের পথে। বর্তমানে মাদ্রাসার পরিস্থিতি শান্ত।

মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, সো‘মবার জামিয়ার পরিচালনা কমিটির সভায় মাদ্রাসার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি আবদুল হক সাহেবের সব দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মুফতি আব্দুল হক ও হাফেজ শহীদুল্লাহ উভয়েই আর কোনো সমস্যা হবে না মর্মে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু দুঃখজনক, কিছুক্ষণ পর জানা যায়, হাফেজ শহীদুল্লাহ মাদ্রাসায় গেলে তাঁকে প্রতিপক্ষের লোকজন মারধর করে রক্তাক্ত করে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। গত বছরের ২৭ অক্টোবর মাদ্রাসার শিক্ষক আজিজুল হককে চারিত্রিক ও আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে বহিষ্কার করেন প্রিন্সিপাল মুফতি আবদুল হক। এর পর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করলে প্রতিষ্ঠানটিতে অস্থিরতা দেখা দেয়।


সর্বশেষ সংবাদ