টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ

১৫ কোটি টাকার দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের জাল যোগদানের নাটক

টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ
টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ  © টিডিসি ফটো

গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজে প্রায় ১৫ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়া আবারও আলোচনায়। সম্প্রতি তার ‘জাল যোগদান’ নাটক ঘিরে প্রতিষ্ঠানজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক তোলপাড়।

জানা গেছে, অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে প্রায়  ১৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার আর্থিক অনিয়ম ও শিক্ষকদের বিভিন্ন খাতের ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলমান। সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পান।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) অধ্যক্ষের ছোট ভাই ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল উদ্দিন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, ‘অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া স্কুলে পুনরায় যোগদান করেছেন।’ পোস্টে হাজিরা খাতা ও অধ্যক্ষের অফিসে বসা একটি ছবিও যুক্ত করা হয়। মুহূর্তেই পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং টঙ্গীজুড়ে চরম আলোচনার জন্ম দেয়।

তবে পরে জানা যায়, সেদিন অধ্যক্ষ আসলে স্কুলে যাননি। ব্যবহৃত ছবিটি ছিল পুরোনো এবং হাজিরা খাতায় দেওয়া স্বাক্ষরটি জাল।

সহকারী প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মঙ্গলবার আলাউদ্দিন মিয়া স্কুলে আসেননি। হাজিরা খাতা আমার অফিসেই থাকে। আমরা কোনো অফিসিয়াল যোগদানপত্র পাইনি। পরে দেখি, খাতায় জাল স্বাক্ষর করা হয়েছে।’

এর আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে গভর্নিং বডির সভাপতি শাহ নাওয়াজ দিলরুবা খানের কাছে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দেওয়া হলেও, কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ করা হয়। এতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

পরে জানা যায়, সভাপতি শাহ নাওয়াজ দিলরুবা খান কারাবন্দি অবস্থায় থাকা অধ্যক্ষের জন্য ‘অস্বাভাবিক ছুটি’ অনুমোদন দিয়ে তাকে পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এদিকে সামাজিক মাধ্যমে আরও অভিযোগ উঠেছে— সভাপতি শাহ নাওয়াজ দিলরুবা খান নাকি দুই কোটি টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষকে পুনর্বহাল করার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

প্রবীণ রাজনীতিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাসান উদ্দিন সরকার বলেন,‘এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করেছে দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীরা। প্রশাসনের উচিত দ্রুত তাদের অপসারণ করা, নইলে এর দায় গভর্নিং বডিকেই নিতে হবে।’

প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তারা অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ও বিতর্কিত সভাপতির অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়া এবং সভাপতি শাহ নাওয়াজ দিলরুবা খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অধ্যক্ষের ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং সভাপতি ফোন রিসিভ করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ