গাইবান্ধায় ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ
- টিডিসি ওয়ার্ল্ড
- প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪২ AM , আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৩ AM
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে এক অসুস্থ গরু জবাইয়ের পর অন্তত ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) গ্রামের মাহবুর রহমানের একটি অসুস্থ গরু জবাই করে প্রায় ১২০ জনের মধ্যে মাংস ভাগ করে দেওয়া হয়। গরু জবাই ও মাংস কাটার কাজে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ১০-১৫ জন। জবাইয়ের কয়েকদিন পর থেকেই তাদের শরীরে ফোসকা, ঘা ও পচনের মতো লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে।
আক্রান্তদের মধ্যে সাত জন চিকিৎসা নিয়েছেন গাইবান্ধা শহরের রাবেয়া ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম ও রাবেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। গুরুতর আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহবুর রহমান। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মঞ্জুরুল করিম প্রিন্স জানান, সাত জন রোগীর শরীরে অ্যানথ্রাক্সের নিশ্চিত উপসর্গ দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘রোগীদের হাতে, মুখে, চোখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোসকা ও পচন ধরেছে। জ্বর, ব্যথা, চুলকানি ও ঘায়ের সমস্যায় তারা ভুগছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে। তবে রোগটি ছোঁয়াচে নয় এবং নিয়মিত চিকিৎসায় তারা সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও কয়েকজন আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক। তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ৪-৫ জন রোগী অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে এসেছিলেন। তাদের গাইবান্ধা ও রংপুরে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. মোজাম্মেল হক জানান, পাশের পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ছিল, যা এখন সুন্দরগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ঘাঘট ও তিস্তা নদীবেষ্টিত বামনডাঙ্গা, সর্বানন্দ, তারাপুর, বেলকা ও পৌরসভা এলাকায় এ রোগ শনাক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকায় গবাদি পশুকে অ্যানথ্রাক্সের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত পশু জবাই করলে বা পরিচর্যার মাধ্যমে রোগটি মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে। তবে মাংস খাওয়ার মাধ্যমে সাধারণত সংক্রমণ হয় না। এজন্য অসুস্থ পশু জবাই না করার ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক থাকতে হবে।’
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসন সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং এবং সভার আয়োজন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে আক্রান্ত পশু জবাই নিষিদ্ধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।