ফুলবাড়ীয়ার লাল চিনি পেল জিআই স্বীকৃতি

লাল চিনি বিক্রি করছেন একজন বিক্রেতা
লাল চিনি বিক্রি করছেন একজন বিক্রেতা   © টিডিসি

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার আখের রস থেকে হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী লাল চিনি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। ঐতিহ্যবাহী লাল চিনি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার খবরটি মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদ নিশ্চিত করেছেন।

কোনো রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে আখের রস থেকে তৈরি এই চিনি লাল একটি বিশেষ ও ঔষধি গুণসম্পন্ন খাদ্যপণ্যে পরিণত করেছে। এ প্রক্রিয়ায় তৈরি চিনিতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রণ ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। শরবত, পিঠা ও মিষ্টান্ন তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এই মিহি দানার চিনি।

ফুলবাড়ীয়ার লাল চিনি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় স্থানীয় কৃষক এবং উৎপাদকরা লাভবান হবেন। এতে করে পণ্যটির দেশ-বিদেশে বাজারজাতকরণ সহজ হবে বলছেন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার বাকতা, কালাদহ ও রাধাকানাই ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কৃষকেরা আখ উৎপাদন ও লাল চিনি তৈরির কাজ করেন। উপজেলায় প্রতিবছর শতকোটি টাকার লাল চিনি বিক্রি হয়। লাল চিনি মাড়াই মৌসুম শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসে, কার্যক্রম চলে চৈত্র মাস পর্যন্ত। মাড়াই মৌসুমে ওই এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। এটি আখের রস থেকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। উৎপাদন প্রক্রিয়ার ভিন্নতার কারণে এর রং লাল হয় এবং এতে গুড়ের উপাদান থাকে। আখমাড়াই মেশিনে আখের রস বের করে জ্বালঘরে জাল করার পর মাটিতে গর্ত করে তৈরি চুলায় কড়াই বসিয়ে রস জ্বাল দেওয়া হয়। রস পূর্ণ জ্বাল হওয়ার পর কড়াইসহ চুলা থেকে নামিয়ে কাঠের ডাং বা কাঠি আঞ্চলিক কথ্য ভাষায় ‘ডোভ’ দিয়ে বিরামহীন ঘুটতে থাকে, যতক্ষণ না শুকনো ধূলার মত আকার ধারণ করে। আখের গুণগত মান খারাপ হলে ধুলার মতো না হয়ে গুটি গুটি আকার ধারণ করে। ধুলার মতো বা গুটির মতো যা-ই হোক, স্থানীয় ভাষায় এটাই লাল চিনি। দেখতে ধূসর খয়েরি হলেও সাদা চিনির বিপরীতেই হয়তো লাল চিনি নামকরণ।

আরও পড়ুন: ব্যানার ফেলে দেওয়া ইস্যুতে চারুকলা শিক্ষার্থীদের ওপর দায় চাপানো পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র

কৃষি বিভাগ সূত্রে আরো জানা যায়, ২০২৫ সালে উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ জমিতে দেশি জাতের আখ, বাকিতে ঈশ্বরদী-৪১ ও ঈশ্বরদী-৪২ জাতের আখ চাষ হয়। এক হেক্টর জমিতে উৎপাদিত আখ থেকে প্রায় আট মেট্রিক টন লাল চিনি হয়। লাল চিনি প্রতি মণ গড়ে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এ বছর প্রায় ১০৮ কোটি টাকার লাল চিনি বিক্রি করেছেন কৃষকেরা। প্রাকৃতিক হওয়ায় শরবত বা মিষ্টান্নে ব্যবহার করলে কাঁচা রসের স্বাদ পাওয়া যায়। ফলে দেশ-বিদেশে এর চাহিদা আছে। অনেকেই বিদেশেও নিয়ে যাচ্ছেন এ চিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে। আগে যাঁরা লাল চিনি সম্পর্কে জানতেন না, তাঁরাও এখন জানবেন। কৃষকেরা উৎপাদন বাড়াবেন, সরকারেরও পৃষ্ঠপোষকতা বাড়বে। অর্গানিক পণ্য হিসেবে যদি দেশের বাইরে রপ্তানি করা যায়, তাহলে চাষিদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে। গত ২০২৪ সালের ১১ জুলাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ফুলবাড়িয়ার লাল চিনির জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়। অন্য কোনো পক্ষের দাবি না থাকায় সব প্রক্রিয়া শেষে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি। সনদের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিয়েছি।’

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর ইসলাম বলেন, ফুলবাড়ীয়ার লাল চিনি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই স্বীকৃতি পাওয়ায় ফুলবাড়িয়া উপজেলা এবং ময়মনসিংহ জেলার সুনাম অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ স্বীকৃতিতে উচ্ছ্বসিত এ অঞ্চলের মানুষ। এ স্বীকৃতি এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence