জলাবদ্ধতা–কক্ষ সংকটে ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজে
- ফেরদৌস আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৫৮ AM , আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৫, ১২:২৩ PM
গাইবান্ধার ফুলছড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজ একটি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার আলো ছড়ালেও বর্তমানে তীব্র জলাবদ্ধতা ও শ্রেণিকক্ষের ভয়াবহ সংকটে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এতে হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ১৯৯১ সালে ১ একর সাড়ে ৬৫ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট সরকারীকরণ লাভ করে। বর্তমানে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ ৩৮ জন শিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে মোট ৪৯ জন কর্মরত রয়েছেন। তবে প্রায় ২ হাজার ২ শত শিক্ষার্থীর এই বিপুল সংখ্যার তুলনায় কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা একেবারেই অপ্রতুল।
কলেজ ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হল জলাবদ্ধতা। তুলনামূলক নীচু এলাকায় অবস্থান এবং দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই কলেজ প্রাঙ্গণ পানিতে তলিয়ে যায়। মূল ফটক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক ভবন ও অ্যাকাডেমিক ভবনের প্রবেশপথ পর্যন্ত হাঁটুসমান পানি জমে যায়। এতে শিক্ষার্থীদের কলেজে আসা-যাওয়া করা দুরূহ হয়ে পড়ে। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়, প্রায়ই ক্লাস বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকদেরও পানি ভেঙে বা পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে শ্রেণিকক্ষে পৌঁছাতে হয়। এই নোংরা পানি মশা-মাছির উপদ্রব ও পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে, যা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।
এদিকে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি সমানতালে চলে আসে পাঠদান কক্ষের চরম সংকটের সমস্যা। প্রশাসনিক ভবনের অভাবের কারণে অ্যাকাডেমিক ভবনেই চলে প্রশাসনিক কাজকর্ম, যা শ্রেণিকক্ষের সংখ্যাকে আরও সংকুচিত করেছে। মাত্র কয়েকটি শ্রেণিকক্ষের উপর ভর করে প্রায় ২ হাজার ২ শত শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। এর ফলে একই কক্ষে একাধিক শিফটে ক্লাস নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষকদের অনেক সময় কলেজের বারান্দায় বা খোলা আকাশের নিচেও ক্লাস নিতে হচ্ছে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা তাদের ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, গাদাগাদি করে বসতে হয়, বসার জায়গা না পেলে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়, এবং সিলেবাস ঠিকমতো শেষ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কলেজের শিক্ষকরা এই প্রতিকূল পরিবেশে মানসম্মত শিক্ষাদানকে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শিক্ষক পরিষদের সদস্য সচিবসহ অনেকে দ্রুত সমস্যা সমাধানে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাদের মতে, আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ ও সংস্কার এবং নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণই এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ। অন্যথায়, এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়বে।
অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম আশাদুল ইসলাম জানিয়েছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তাঁর মতে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতি বছর বাড়লেও সেই অনুপাতে অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি। শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার জন্য দ্রুত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।