৩৯ বছরেও সংকট কাটেনি চৌদ্দগ্রাম বিসিক শিল্প নগরীর
- কুমিল্লা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ০২:২০ PM , আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৫, ১১:৫৮ PM
১৯৮৬ সালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদ ও ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে প্রতিষ্ঠিত হয় চৌদ্দগ্রাম বিসিক শিল্প নগরী।। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরেও অধরাই রয়ে গেল স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কারখানা স্থাপন ও বেকারদের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন। নেই কলকারখানার যন্ত্রপাতির শব্দ, পদচারণা নেই শ্রমিকদের। দিনের বেলাতেও সুনসান নিরবতা। জানা গেছে, ১১.০৩ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠা শিল্প নগরীটিতে দলীয় বিবেচনায় রাজনৈতিক নেতাদের প্লট বরাদ্দে প্রকৃত উদ্যোক্তারা পায়নি সুযোগ। প্রতিষ্ঠার চার দশক পরও বরাদ্দকৃত অনেক প্লট-ই ঘন জঙ্গল, যা এখন গোচারণভূমি। কাগজে কলমে উৎপাদনে থাকা প্লটের সংখ্যা বেশি হলেও বাস্তবে তা দখলেই সীমাবদ্ধ।
বিসিক শিল্পনগরী কার্যালয়ের তথ্যমতে, উৎপাদনে রয়েছে এমন প্লটের সংখ্যা ৫৫টি। বর্তমানে বেকারি, মোমবাতি, চিড়া, মুড়ি, হাঁড়ি-পাতিল ইত্যাদি তৈরির কারখানা অন্যতম। প্লট রয়েছে সর্বমোট ৯০টি। বরাদ্দযোগ্য শিল্প প্লট ৮৩। বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬৮টি। বন্ধ রয়েছে ১৩টি। উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ ৪৪ কোটি টাকা। কর্মরত পুরুষ শ্রমিক ১১৩০ ও নারী শ্রমিক ৭৬০ জন। ৫ টি প্লটে নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে ৮টি প্লটের। ব্যাংক সিলগালা করে রেখেছে ৪ টি প্লট। তবে সরজমিনে বিসিক শিল্পনগরী কার্যালয়ের দেয়া তথ্যের বাস্তব চিত্র মিলেনি। কাগজে কলমে অধিকাংশ প্লটে স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও অধিকাংশ প্লটে স্থাপনা নির্মাণের নামে এক কোণে একচালা টিনের ঘর, দুই তিন ফুট ইটের গাঁথুনির দেয়ালই স্থাপনা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজনৈতিক বন্দোবস্তে কয়েকজনের হাতে চলে যায় এক তৃতীয়াংশ প্লট। এরমধ্যে পৌরসভার শ্রীপুর গ্রামের সাবেক যুগ্মসচিব জাকির হোসেনের কাছে ৭টি প্লট যার সবগুলোই বন্ধ। জয়ন্তিনগর গ্রামের সোলেমান কোম্পানির কাছে রয়েছে ৬টি প্লট যার মধ্যে বন্ধ রয়েছে ১টি। পাঁচরা গ্রামে তাজুল ইসলাম পাটোয়ারীর কাছে রয়েছে ৫ টা, ৩টি সচল ২টি অচল, স্টার ফুড এর কাছে ৬টি। প্রশাসনিক উদাসীনতা ও রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছার অভাবে বিসিকে ক্ষুদ্র শিল্পায়ন না হলেও জমজমাট প্লট ইজারা স্বত্ব কেনা-বেচা। লিখিত স্ট্যাম্পে হয় হাত বদল।
বিসিক মালিকরা সম্ভাবনার বাধা হিসেবে বলছেন বিভিন্ন সংকটের কথা। গ্যাস সংকটে বন্ধ রয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ও সিলিকেট ফ্যাক্টরিসহ কয়েকটি ফ্যাক্টরি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজন আলাদা সঞ্চালন লাইন। ড্রেনেজ সমস্যায় অল্প বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। কাঁচা সড়কে কাঁদায় যান চলাচলের সমস্যাও বর্ষায় নিত্যকার। তবে সবচাইতে বড় সমস্যা নিরাপত্তা। চারপাশে সীমানাপ্রাচীর না থাকায় চুরি চিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে প্রায়ই। দিনের বেলাতেই বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। সড়কবাতি না থাকায় রাতে চলাচল আরো ঝুঁকিপূর্ণ। ভয়ে প্রতিবাদ করেন না কেউ। সীমানাপ্রাচীর না থাকা ও রাতে নিয়মিত পুলিশের টহল না থাকাকে চুরি ছিনতাই বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলছেন মালিকপক্ষ। তাদের দাবি নিয়মিত পুলিশের টহল থাকলে কমে যেত মাদকসেবীদের আড্ডা।
এ বিষয়ে বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা জাফর আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত বিসিক। ইতোমধ্যে চলতি বছর বিসিকের রাস্তা ও অফিস ভবন মেরামতে ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আগামী বাজেটে প্রাক্কলন দেয়া হয়েছে প্রায় ২.৫ কোটি টাকা। ওটা পেলে ড্রেনেজ ও রাস্তা নির্মাণের বাকি কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। চলতি বছর জুনে রুগ্ণ ও বন্ধ শিল্প কারখানা সচলে বৈঠক ডাকা হয়। ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট শিল্প মালিকদের ডেকে তাদের কথা শোনা হয়। আমরা নির্বিঘ্ন গ্যাস সরবরাহ , সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন ও বিদ্যুৎ সরবরাহে আলাদা সঞ্চালন লাইনের ব্যবস্থা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি।
বিসিক মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব নূর হোসেন মিয়াজী, ‘বাইরে থেকে অনেক উদ্যোক্তা এসেছিলেন, কিন্তু সীমানা প্রাচীর না থাকায় চুরি ছিনতাইয়ের কারণে কেউই এখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেনি। ইতোমধ্যে নিরাপত্তার জন্য ২ জন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিয়েছি। আমি দায়িত্ব নেয়ার পরে ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা পাকা রাস্তা নির্মাণে ব্যায় করা হয়েছে। এছাড়াও অফিস মেরামতে খরচ হয়েছে ১০ লাখ। আমরা চেষ্টা করতেছি সবগুলো প্লট উৎপাদনে সচল করার জন্য। বিসিকের পরিত্যক্ত প্লট গুলোর বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় যদি সুদৃষ্টি দেন তাহলে অতিদ্রুত বিসিকের সার্বিক উন্নতি, অচল প্লট গুলো সচল ও সকল সমস্যা দূর হয়ে যাবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জামাল হোসেন বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে বিসিকের ড্রেনেজ ও সড়কের কাজ চলছে। বিসিকের ভেতরে সড়কবাতি ও আলাদা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’