ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিএনজিচালকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে ভোগান্তি চরমে
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩১ PM , আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:৫৫ PM
চার দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিএনজিচালকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। লাইসেন্স জটিলতা, ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগ তুলে রবিবার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে জেলার সব রুটে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেন চালক ও মালিকরা। ফলে অফিসগামী কর্মজীবী, শিক্ষার্থী ও রোগীসহ হাজারো যাত্রীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এইচএসসি পরীক্ষার সময় এ ধরনের কর্মসূচি শিক্ষা ও ভবিষ্যতের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন পরীক্ষার্থীরা। যদিও চালকরা দাবি করেছেন, পরীক্ষার্থী ও জরুরি সেবার ক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনায় কিছু ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট—বিশ্বরোড চত্বর, সরাইল সদর, কালিকচ্ছ, শহর কেন্দ্রসহ প্রায় সব স্থানে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে কয়েক লাখ যাত্রী, বিশেষ করে শিক্ষার্থী, রোগী ও কর্মজীবীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
চালকদের ৪ দফা দাবি হলো বিনা কারণে সিএনজি আটক বন্ধ করতে হবে; ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ; সিএনজি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া পুনরায় চালু ও চালকদের জন্য কাগজপত্র নবায়নে নির্দিষ্ট সময় ও সহনীয় নিয়ম নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রেরণার উৎস, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান আমাদের চেতনা: প্রিন্স
এ ব্যাপারে কালিকচ্ছ শ্রমিক-মালিক সমিতির সভাপতি চন্দন দেব বলেন, বিনা কারণে অন্তত ৩০০ সিএনজি জব্দ করা হয়েছে। ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ হতেই পুলিশের হয়রানি বাড়ছে।
জেলা মালিক-শ্রমিক সমিতির প্রচার সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, আগে মাসে ৫০০ টাকা দিয়ে গাড়ি চালানো যেত। এখন ঘুষ না দিলে নানা কাগজপত্রের অজুহাতে গাড়ি আটকানো হচ্ছে।
শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হেফজুল করিম বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সেটাকেই অজুহাত বানিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলনে থাকব।’
এদিকে জেলা পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করছে। যাদের কাগজপত্র ঠিক নেই, তাদের গাড়ি জব্দ করা হচ্ছে। কাগজপত্র থাকলে কেউ হয়রানির শিকার হচ্ছেন না। কিন্তু সিএনজি চালকেরা যেন কোনোভাবেই আমাদের থামাতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে মালিক বা চালকদের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’
আরও পড়ুন: মসজিদ নির্মাণ নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ-অগ্নিসংযোগ, ১৪৪ ধারা জারি
এ নিয়ে সাধারণ মানুষ বলছে, দাবি যৌক্তিক হলেও ধর্মঘটের সময় ও কৌশল নিয়ে প্রশ্ন আছে। তারা মনে করেন, প্রশাসন ও চালক সংগঠন আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে না পৌঁছালে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে।
এর আগে গতকাল শনিবার (২৬ জুলাই) শহরের প্রধান সড়কে সিএনজি মালিক-শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে তাদের দাবি তুলে ধরেন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে। জনগণ প্রত্যাশা করছে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে।