ভিসা জটিলতায় বেনাপোলে যাত্রী ধস, কমেছে সরকারের আয়

ভিসা জটিলতা
ভিসা জটিলতা  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্তের ব্যস্ততম প্রবেশদ্বার বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে যাত্রী পারাপার এক বছরে হঠাৎ মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই পথে যাতায়াত করেছেন মাত্র ১১ লাখ ৯০ হাজার ৮২১ জন, যেখানে আগের অর্থবছরে সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৫ হাজার ৪৭৮। পরিসংখ্যান বলছে, যাত্রী কমেছে ১০ লাখ ৬০ হাজারের বেশি অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক। এর প্রতিফলন মিলেছে রাজস্বেও; ভ্রমণ কর থেকে আয় কমেছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা (২০০ কোটি → ১১০ কোটি টাকা)।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন ভবনে একসময় যাত্রীদের দীর্ঘ সারি ছিল নিত্য চিত্র। এখন বেশির ভাগ কাউন্টারে কর্মকর্তারা হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রীর পাসপোর্ট খুটিয়ে দেখছেন; কুলি-শ্রমিকরাও অলস সময় পার করছেন। সীমান্তের ‘শূন্যরেখা’তেও নেই কোলাহল।

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, পতনটির প্রধান কারণ ভারতীয় ভিসা জট। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দিল্লির রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য কার্যত বন্ধ হয়ে যায় ট্যুরিস্ট ভিসা। এখনও স্বাভাবিক হয়নি প্রক্রিয়া। বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, “বাংলাদেশিরা ভিসা না-পেয়ে ব্যবসা, চিকিৎসা, উচ্চশিক্ষায় বিপাকে পড়ছেন, অথচ ভারতীয় নাগরিকেরা ঢাকার মিশন থেকে সহজেই ভিসা পাচ্ছেন।”

ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ব্যবস্থাপনার সমন্বয়হীনতা, দালালচক্রের দৌরাত্ম্য, পর্যাপ্ত ছাউনি ও পানির অভাব সব মিলিয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। পাসপোর্ট যাত্রী বিশ্বজিৎ কুমার ক্ষোভ ঝাড়েন, “ভ্রমণ কর বাড়লেও সার্ভিস উন্নত হয়নি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদ-বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকা লাগে।” অপর যাত্রী সোহাগ হোসেন জানান, পদ্মা সেতু খুলে ঢাকার সঙ্গে যাতায়াত সহজ হলেও বন্দর সকাল সাড়ে ৬টার আগে না-খোলায় সুবিধা মিলছে না।

বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক কাজী রতন বলেন, যাত্রী ছাউনির জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। নিরাপত্তা জোরদার ও ভারতীয় অংশের ইমিগ্রেশনকে সেবার মান উন্নয়নের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইমিগ্রেশন পুলিশ-এর ওসি ইলিয়াস হোসেন মুন্সী জানান, ভিসা সংকটের আগেই প্রতিদিন ৮-১০ হাজার যাত্রী পারাপার হতো; এখন সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় এক হাজারের ঘরে। ১৩ জুলাই বন্দর দিয়ে ভারতে গেছেন ৯৬৯ জন, ফিরেছেন ৭১৯ জন—এর মধ্যে ভারতীয় নাগরিক ৩২৫ জন, অন্য দেশের মাত্র একজন।

 


সর্বশেষ সংবাদ