এক ভিসায় ঘুরে আসুন ইউরোপের ২৯ দেশ

এক ভিসায় ইউরোপের ২৯ দেশ ভ্রমণ করবেন যেভাবে
এক ভিসায় ইউরোপের ২৯ দেশ ভ্রমণ করবেন যেভাবে  © সংগৃহীত

বিদেশে ভ্রমণের স্বপ্ন দেখেন অনেকেই, কিন্তু ভিসা প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় অনেক সময় সে স্বপ্নে ভাটা পড়ে। তবে ইউরোপে ভ্রমণের জন্য রয়েছে এক অসাধারণ সমাধান—শেনজেন ভিসা। এই একটি ভিসা নিয়ে আপনি ভ্রমণ করতে পারেন ইউরোপের ২৯টি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ, আলাদা করে প্রতিটি দেশের জন্য ভিসা নিতে হবে না।

‘শেনজেন ভিসা’ অন্যান্য সাধারণ ভিসার তুলনায় আলাদা, কারণ এটি একটি ভিসা নিয়েই ইউরোপের ২৯টি দেশ ভ্রমণ করার সুযোগ দেয়। এসব দেশ নিজ নিজভাবে স্বাধীন হলেও, ভিসা নীতিতে তারা একতাবদ্ধ। তাই শেনজেনভুক্ত যে কোনো একটি দেশের ভিসা পেলে বাকি ২৮টি দেশেও অনায়াসে যাতায়াত করা যায়। প্রয়োজন হয় না আলাদা ভিসার।

শেনজন ভিসার পরিচিতি

ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিয়ে একটি একীভূত অঞ্চল তৈরি করে সবার যাতায়াত সহজ করা লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গের শেনজেন শহরে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সে চুক্তির ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে শেনজেন এলাকা এবং শেনজেন ভিসা। ইউরোপের অধিকাংশ এলাকা এই শেনজেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই ভিসা নিয়ে ৯০ দিনের জন্য বেড়ানো বা ব্যবসাসংক্রান্ত প্রয়োজনে ইউরোপে ঘুরে আসা যায়।

শেনজেন অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ কোটি। আয়তন ৪৫,৯৫,১৩১ বর্গকিলোমিটার। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ প্রতিদিন একটি অভ্যন্তরীণ ইউরোপীয় সীমান্ত পেরিয়ে কাজ করার জন্য অন্য দেশে যাতায়াত করে এবং কিছু অঞ্চলে তারা কর্মশক্তির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত গঠন করে। প্রতি বছর শেনজেন এলাকায় মোট প্রায় ১৩৫ কোটি মানুষের সীমান্ত পারাপার ঘটে থাকে। 
 
ভৌগোলিক অবস্থা, বাণিজ্য অংশীদার এবং অন্যান্য কারণের ওপর নির্ভর করে শেনজেন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যের ব্যয় ০.৪২% থেকে ১.৫৯% পর্যন্ত হ্রাস পায়। শেনজেন এলাকার বাইরের দেশগুলোও এ কারণে উপকৃত হয়। শেনজেন অঞ্চলের রাজ্যগুলো শেনজেনভুক্ত নয় এমন দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে।

শেনজেনভুক্ত দেশ
 
অস্ট্রিয়া, আইসল্যান্ড, ইতালি, এস্তোনিয়া, গ্রিস, চেক রিপাবলিক, জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, মাল্টা, লুক্সেমবার্গ, লিচেনস্টাইন, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, স্পেন, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, হাঙ্গেরি, ক্রোয়েশিয়া, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া।

শেনজেন ভিসা কিভাবে পাবেন 

অনলাইনে আবেদন করা যায়। আবেদন করতে এবং আবেদনপদ্ধতিসহ অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

বি.দ্র: আবেদন ফরমটি সতর্কতার সঙ্গে পূরণ করতে হবে। দুই পাশের প্রতিটি ঘর পূরণ করতে হবে। এই ফরমে কোনো ঘর ফাঁকা রাখা অথবা তথ্যে ভুল থাকা যাবে না। এমন হলে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করা হবে না। আবেদন ফরমের একটি কপি জমা দিতে হবে। আর ফরমে অবশ্যই তারিখ ও স্বাক্ষর থাকতে হবে।

শেনজেন ভিসা ফি

শেনজেন ভিসা পাওয়ার স্ট্যান্ডার্ড ফি ৯০ ইউরো ডলার। এই ফি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। ছয় থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য ভিসা ফি ৪৫ ইউরো। ছয় বছরের নিচের শিশুদের ভিসা ফি লাগে না।

মনে রাখবেন

*ভিসা ফি শুধু নগদে পরিশোধযোগ্য;

*ফি জমা দেওয়ার পর তা ফেরতযোগ্য নয়, এমনকি ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলেও;

বাংলাদেশ থেকে শেনজেন ভিসা পাওয়ার উপায়

২৯টি শেনজেনভু্ক্ত দেশের যে কয়টির দূতাবাস বাংলাদেশে আছে সেখানে যোগাযোগ করে শেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। মনে রাখতে হবে শেনজেনভুক্ত যে কোনো দেশের দূতাবাস থেকেই এই ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র—

১. ভিসা আবেদনের সঙ্গে যেসব কাগজ জমা দিতে হবে

*ভ্রমণ শেষ হওয়ার পরও অন্তত ছয় মাস মেয়াদ থাকবে এমন পাসপোর্ট জমা দিতে হবে; 

*দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড);

*পাসপোর্টের ব্যক্তিগত তথ্যের পৃষ্ঠাগুলোর পরিষ্কার ফটোকপি;

*প্রতিটি কাগজের মূল কপির সঙ্গে একটি করে ফটোকপিও জমা দিতে হবে;

*সব কাগজপত্র বাংলার সঙ্গে ইংরেজি অথবা জার্মান অনুবাদ করে জমা দিতে হবে;

*স্বাস্থ্য বিমা করতে হবে (ন্যূনতম ৩০ হাজার ইউরো সমমূল্যের); 

*ইংরেজি, জার্মান বা অন্য কোনো ভাষায় দক্ষতা থাকলে ভিসা পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়;

২. ভ্রমণ ভিসার ক্ষেক্ষেত্রে

*কোন কোন জায়গায় ভ্রমণ করবেন সেগুলোর বিস্তারিত তথ্য; 

*বিগত তিন মাসের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবের বিবরণ; 

*হোটেল বুকিং তথ্য (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। বি.দ্র: হোটেল বুকিং কনফার্মেশনের ই-মেইল প্রিন্ট কপি গৃহীত হয় না;

*ম্যারেজ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট ও সন্তান-সন্ততির তথ্য (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);

৩. বিজনেস ভিসার ক্ষেত্রে

*বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষ থেকে ভ্রমণে যাচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানের তরফে ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে লেখা চিঠি জমা দিতে হবে; 

*কোম্পানির পাঠানো আমন্ত্রণপত্রের মূলকপি এবং আমন্ত্রণপত্র অবশ্যই ইংরেজি বা জার্মান ভাষায় হতে হবে; 

*ট্রেড লাইসেন্স ও কোম্পানির গত তিন মাসের ব্যাংক হিসাবের বিবরণী; 

*কোম্পানির সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন অথবা মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);

*বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে লেনদেনের তথ্য (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);

*ম্যারেজ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট ও সন্তান-সন্ততির তথ্য (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। সেনজেনভুক্ত দেশের আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আরও কিছু অতিরিক্ত কাগজপত্র প্রয়োজন হয়ে। যেমন: হোটেলের ঠিকানাসহ হোটেল রিজার্ভেশনের তথ্য ও স্টল বরাদ্দ হয়ে থাকলে তার এক্সিবিটর পাস; 

৪. কারো সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রে 

*যার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া হবে তার স্বাক্ষরিত গ্যারান্টর ফরম; 

*অন্তত গত তিন মাসের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবের বিবরণ;

*যার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন তার সঙ্গে সম্পর্কের প্রমাণপত্র;  

*ফ্লাইট রিজার্ভেশন কপি;

*হোটেল বুকিং তথ্য (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। বি.দ্র: হোটেল বুকিং কনফার্মেশনের ই-মেইল প্রিন্ট কপি গৃহীত হয় না; 

*ম্যারেজ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট ও সন্তান-সন্ততির তথ্য (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);

৫. শিশুদের ক্ষেত্রে

বাবা-মা বা বৈধ অভিভাবকের অনুমতিপত্র এবং শিশুদের ভিসা আবেদনের সময় অভিভাবকে অবশ্যই দূতাবাসে উপস্থিত হতে হবে; 

৬. এয়ারপোর্ট ট্রানজিট ভিসার ক্ষেত্রে

*সেনজেন এলাকা থেকে যে দেশে যাবেন সে দেশের ভিসা;

*ফ্লাইট রিজার্ভেশন;

বি: দ্র: ট্রানজিট ভিসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিমা প্রয়োজন হয় না;

ভিসা ইন্টারভিউ

সর্বশেষ সেনজেন দেশগুলোর দূতাবাস থেকে আবেদনকারীর সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। এই সাক্ষাৎকারটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎকার সম্পন্ন করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ