ফেনীতে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ছাগলনাইয়া উপজেলা, আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৭ হাজার মানুষ
- ফেনী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৭ AM , আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৬ AM
ফেনীতে টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২১টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে শতাধিক গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা।
বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও বাঁধ ভাঙার স্থানে এখনো প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে ছাগলনাইয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ায় সেখানে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়েছে।
এদিকে, বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ফেনীর কয়েকটি এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। স্থানীয়দের তথ্যমতে, এ দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, পরশুরামের ১২টি ও ফুলগাজী উপজেলায় ৯টিসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মোট ২১টি স্থানে ভেঙে গেছে। তারমধ্যে মুহুরী নদীর ১১টি, কহুয়া নদীর ৬টি ও সিলোনিয়া নদীর ৪টি অংশে ভাঙনে ১০০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সময় বাড়ার সঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক অংশে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাদুর্গত ৬ হাজার ৮২৬ জন মানুষ অবস্থান করছেন। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ইতোমধ্যে ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবক মাঠে কাজ করছে।
ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের উত্তর সতর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গত দুই দশকে উত্তর সতর নদীকূলবর্তী সড়কটির কোনো উন্নয়ন হয়নি। ফলে প্রতিবছর বর্ষা এলেই মুহুরী নদীর পানি এই সড়ক পেরিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে আশপাশের গ্রামগুলো নিয়মিতই প্লাবিত হয়।
ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সুজন বলেন, পরশুরাম ও ফুলগাজীর বাঁধ ভেঙে আসা পানিতে ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তিনি বলেন, সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পানির চাপও বাড়ছে। যদি এ অবস্থায় আবার বৃষ্টি শুরু হয়, তাহলে এই পানি ফেনী সদর উপজেলাতেও ঢুকে পড়তে পারে।
এদিকে জেলাজুড়ে হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ফেনী জেলায় টানা তিন দিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার (৯ জুলাই) রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজও জেলাজুড়ে হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রাত ১১টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর পানি কমলেও ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি কমার পরেই বাঁধ মেরামতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবল চাকমা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মাঠপর্যায়ে থেকে দুর্গত মানুষের সহায়তায় আমরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছি। উপজেলায় ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র স্রোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির ফলে প্রায় ২০ হাজার মানুষ দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, জেলায় ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, ছয়টি উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।