নদী ভাঙনের আতঙ্কে দিশেহারা চর আষাড়িয়াদহ ও আলাতুলির হাজারো মানুষ

পদ্মা নদী ভাঙনের আতঙ্কে দিশেহারা চরের মানুষ
পদ্মা নদী ভাঙনের আতঙ্কে দিশেহারা চরের মানুষ  © টিডিসি

রাজশাহীর সীমান্তঘেঁষা গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ও আলাতুলি ইউনিয়ন এখন এক নিঃশব্দ হাহাকারের জনপদ। প্রতিদিন পদ্মার গর্জনের সাথে তলিয়ে যাচ্ছে মানুষের স্বপ্ন—ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট আর জীবনের সঞ্চয়। এখানকার মানুষ যেন প্রতিনিয়ত দাঁড়িয়ে আছেন এক অনিশ্চিত ভাঙনের মুখে। কেউ ইতিমধ্যে সব হারিয়েছেন, কেউ অপেক্ষায় আছেন—কবে ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে দেখবেন, নদী গিলে ফেলেছে তাদের শেষ আশ্রয়টুকু। এখানকার প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নদীভাঙনের আতঙ্কে দিন গুনছেন। জীবনযুদ্ধের এই করুণ বাস্তবতায় চারদিকে শুধু হাহাকার, অথচ নেই কোনো স্থায়ী সমাধানের দৃশ্যমান উদ্যোগ।

স্থানীয় কৃষক তরিকুল ইসলাম আলী বলেন, এক সময় আমার ছয় বিঘা জমি ছিল। নদী ইতোমধ্যে তিন বিঘা নিয়ে নিয়েছে, এখন বুঝে গেছি বাকি তিনটাও যাবে। নিজের চোখের সামনে ঘরটা নদীতে চলে যেতে দেখেছি, কিছুই করার ছিল না। জমি রক্ষা করতে পারছি না, চোখের সামনে সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কী হতে পারে?

চরের শিক্ষার্থী আয়েশা খাতুন বলেন, গত বছর আমাদের ঘর নদীতে চলে গেল। এখন মামার বাড়িতে থাকি। স্কুলে যেতে পারি না, পড়ালেখাও বন্ধ। একটা বন্দী জীবনের মতো দিন কাটে। বাড়িঘর না থাকলে মানুষ কেমন করে বাঁচবে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা বাংলাদেশের কেউ নই।

তিনবার বসতভিটা বদলেছেন সেতাবুর। ক্লান্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, সরকারি লোক আসে দেখে যায়, ছবি তোলে। বলে প্রকল্প হবে বাঁধ হবে। কিন্তু কিছুই হয় না। একটা বাড়ি করতে এক জীবনের সঞ্চয় লাগে। সেই বাড়ি ভেঙে গেলে ভেঙে যায় জীবনের স্বপ্নটাও। জানি না এইখানেও আর কয়দিন টিকে থাকতে পারব।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান বলেন, নদীভাঙন শুধু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয় এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এই এলাকার সন্তান, এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও বাড়ির খবর শুনলেই বুক কেঁপে ওঠে আর কিছু রইল কি? পদ্মার গর্ভে মানুষ হারাচ্ছে ঘর জমি স্বপ্ন। একটা জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য লজ্জার যদি আমরা চর আষাড়িয়াদহের মানুষের কান্না শুনেও নীরব থাকি। স্থায়ী সমাধান ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব না। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি এই জনপদের মানুষকে রক্ষা করুন তারা বাংলাদেশেরই নাগরিক।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আব্দুল্লাহীল কাফি বলেন, এই চরের মানুষ দিন দিন নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। আবাদি জমি নেই, ঘর নেই, খাবার নেই, জীবিকার কোনো ব্যবস্থা নেই। যদি এখনই সরকার ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই জনপদ নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যাবে। ৬০ হাজার মানুষের জীবিকা হারাবে। আমরা চাই সরকার এখানে জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করুক।

আলাতুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, আমাদের ৯টি ওয়ার্ডের সবগুলোই এখন পদ্মার ভাঙনের কবলে। কিছু অংশ কেবল টিকে আছে।

চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম (ভোলা) বলেন, আমার ইউনিয়নের ১, ২, ৪ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড নদীভাঙনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে। চর আষাড়িয়াদহ যেন ধীরে ধীরে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকেই মুছে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের প্রায় ৫০০ বিঘা জমি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে, মানুষগুলোকে করেছে অসহায়। আমরা বিগত সরকারগুলোর কাছেও এই নদীভাঙন নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, কিন্তু শুধু আশ্বাসই পেয়েছি। বাস্তবে কিছুই পাইনি। আমরা চাই আমাদের এই অঞ্চলে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করে এলাকাটি রক্ষা করা হোক।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহী পিওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, চর আষাড়িয়াহদ ইউনিয়নের নদী ভাঙন রয়েছে সেটাকে আমরা একটি প্রজেক্টে অন্তর্ভুক্ত করেছি। যদি সেই প্রজেক্ট অনুমোদিত হয়। তাহলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমরা ভাঙ্গনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence