চামড়া ব্যবসায় ধস: টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের
- যশোর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫, ১১:৩০ AM , আপডেট: ১০ জুন ২০২৫, ০৬:২৩ PM
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ মৌসুমি চামড়া হাট যশোরের রাজারহাট আজ আর আগের মতো লাভজনক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু নেই। খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ছাড়াও গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী ও নাটোর থেকে হাজারো মৌসুমি ও স্থায়ী ব্যবসায়ী প্রতি বছর ঈদুল আজহার পরবর্তী সময়ে এই হাটে ভিড় করেন। এখানে বছরে প্রায় শত কোটি টাকার কাঁচা চামড়া কেনাবেচা হয়ে থাকে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা সমস্যায় এই ব্যবসা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা বাজারে কার্যকর হচ্ছে না। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৫৫-৬০ টাকা, খাসির চামড়া ২২-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও, রাজারহাটে চামড়া মানভেদে মাত্র ২০০–৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে ছোট ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ট্যানারি মালিকরা সময়মতো দাম পরিশোধ করেন না। অনেক ব্যবসায়ীর কোটি টাকারও বেশি বকেয়া পড়ে আছে। তিন দশকের অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, “গত বছরের পাওনা এখনও মেলেনি। ৩০০ টাকার চামড়ায় লবণ, শ্রমিক ও পরিবহন খরচ যোগ হলে ৬০০–৭০০ টাকা খরচ পড়ে, অথচ ট্যানারিরা তেমন দাম দিতে চায় না।”
এক সময় হাজারো মৌসুমি ব্যবসায়ী রাজারহাটে চামড়া বিক্রি করতেন, এখন সেই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। মুড়লি মোড়ের ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন পাপ্পু চার হাজার ছাগলের ও ২০০টি গরুর চামড়া সংগ্রহ করলেও দুশ্চিন্তায় আছেন—চাহিদামতো দাম মিলবে কি না।
বেনাপোল-শার্শার মন্টু মিয়া জানান, এখন আর রাজারহাটে চামড়া বিক্রি করেন না। বরং ভালো রাস্তাঘাটের সুবিধায় সরাসরি ঢাকায় চামড়া পাঠান। রাজারহাটের বাজার পরিস্থিতি তাকে হতাশ করেছে।
যশোর জেলা প্রশাসন চামড়া সংরক্ষণের জন্য ৩৭৭টি লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে ২.৫ মেট্রিক টন লবণ বিনামূল্যে দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আকিল আহমেদ অভিযোগ করেন, অনেকে এই লবণ চামড়ায় ব্যবহার না করে আলাদাভাবে বিক্রি করেছেন।
আকিল আহমেদ আরও বলেন, “ট্যানারিরা সঠিকভাবে মূল্য দেয় না, বাছাই করে কিনে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চাপে পড়ে টিকে থাকতে পারছে না। প্রয়োজন তাদের জন্য স্বল্প সুদের ব্যাংক ঋণ। অথচ সরকার শুধু ট্যানারি মালিকদের এই সুবিধা দেয়।”