ভারতে করোনার নতুন ঢেউ, বেনাপোল বন্দরে বাড়তি সতর্কতা
- বেনাপোল প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৫, ১২:৫৭ PM , আপডেট: ১০ জুন ২০২৫, ১২:১৫ AM
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নতুন করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। জেনেটিক সিকোয়েন্স বিশ্লেষণে জানা গেছে, ওমিক্রনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট—এলএফ-৭, এক্সএফজি, জেএন.১ এবং এনবি.১.৮.১—এর কারণে এই সংক্রমণ বেড়েছে। প্রতিবেশী দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্থল ও নৌবন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করা হয়েছে। ৪ জুন রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে এসব ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদেশে বলা হয়েছে, ভারতসহ সংক্রমিত দেশ থেকে আগত সন্দেহভাজন যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার করতে হবে। ইমিগ্রেশন ও আইএইচআর হেলথ ডেস্কের সহায়তায় এসব যাত্রীর শারীরিক লক্ষণ যাচাই এবং প্রয়োজনে স্বাস্থ্য বার্তা প্রদান করতে হবে।
৯ জুন (সোমবার) বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, মেডিকেল ডেস্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ভারতফেরত যাত্রীদের প্রাথমিকভাবে করোনা উপসর্গ আছে কি না তা পরীক্ষা করছেন।
ভারত থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরা যাত্রী পরিতোষ মণ্ডল বলেন, ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলাম, আজ দেশে ফিরেছি। সেখানকার কোথাও করোনার টেস্ট হয়নি, কিন্তু দেশে ফিরেই পরীক্ষা করা হচ্ছে।
আরেক যাত্রী সীমা রানী জানান, এক মাস ভারতে ছিলাম, কোথাও করোনার বিষয়ে কিছু শুনিনি। কিন্তু বেনাপোলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার আব্দুল মজিদ বলেন, ভারতের কিছু অঞ্চলে ওমিক্রনের নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ভারতফেরত সব যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। কারও শরীরে উপসর্গ থাকলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশনে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, নতুন একটি রূপ কোভিড-ওমিক্রন এক্সবিবি নামে চিহ্নিত হয়েছে, যা পূর্ববর্তী ধরনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক এবং ভয়াবহ। এখনও দেশে কেউ এই ধরনে আক্রান্ত না হলেও আশপাশের অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এই ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণগুলো পূর্বের মতো স্পষ্ট নয়। জ্বর বা কাশির পরিবর্তে দেখা দিতে পারে মাথা, গলা, পিঠ বা গাঁটে ব্যথা, নিউমোনিয়ার উপসর্গ, ক্ষুধামান্দ্য ইত্যাদি। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি বিষাক্ত এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি।
এক্সরে রিপোর্টে দেখা গেছে, উপসর্গ না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে হালকা নিউমোনিয়া ধরা পড়ছে। আবার অনেক সময় নাকের সোয়াব পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ এলেও নাসোফ্যারিঞ্জিয়াল পরীক্ষায় পজিটিভ এসেছে। এসব কারণে এই ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটিয়ে তীব্র শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করছে।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল জানান, ঢাকা ও রাজশাহীতে কিছু ব্যক্তি করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন। যশোরবাসীকেও আগাম সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোভিড-ওমিক্রন এক্সবিবি কোভিড-১৯ এর তুলনায় অনেক বেশি ভয়াবহ, তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।