ঈদযাত্রা: আনন্দের বদলে বিষণ্নতা, সড়কে ঝরছে প্রাণ
- আরফান আলী
- প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৫, ১২:৩০ AM , আপডেট: ১০ জুন ২০২৫, ০৭:৫৯ PM
ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মিলনের আনন্দ। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতি বছর ঈদ যাত্রা পরিণত হয় এক বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতায়। শুধু সড়কে নয়, রেলপথেও প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। আনন্দের যাত্রা অনেকের জন্যই হয়ে উঠছে জীবনের শেষ গন্তব্য।
৯ এপ্রিল ২০২৫ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় সারা দেশে সড়কে ৩১৫টি দুর্ঘটনায় ৩২২ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ৮২৬ জন। একই সময়ে রেলপথে ২১টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৮ জন আহত হন। নিহতদের সিংহভাগই সড়কপথে যাত্রাকালে দুর্ঘটনার শিকার হন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অনিয়ন্ত্রিত গতি, চালকের ক্লান্তি এবং সড়কে শৃঙ্খলার অভাব—সবকিছু মিলিয়েই সড়কগুলো হয়ে উঠছে মৃত্যুর ফাঁদ।
আরও পড়ুন: ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে পারে ১৬ জুন, আবেদন শুরু কবে?
মঙ্গলবার (৩ জুন) ঈদের ছুটিতে রাজধানী ঢাকা থেকে পরিবারের সঙ্গে শেরপুরে ফিরছিলেন আমজাদ হোসেন। পথিমধ্যে টাঙ্গাইলে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি ও তার দুই ছেলে—রাহাত ও রাতুল। স্ত্রী এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহতদের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের চরবাবনা কান্দাপাড়া গ্রামে। এই দৃশ্য শুধু এই একটি পরিবারের নয়—ঈদের সময় দেশের নানা প্রান্তে এমন অসংখ্য পরিবার হারায় তাদের প্রিয়জনকে। ঈদের খুশি পরিণত হয় অশ্রু ও শোকে।
ঈদের আগে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল নামায় দেশের প্রধান সড়ক-মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজট দেখা দেয়। অনেকেই বাসের সিট না পেয়ে ট্রাক, পিকআপ কিংবা ছাদে চড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রওনা হন বাড়ির উদ্দেশে। জীবন হাতে নিয়ে যাত্রা করেও অনেকেই আর পৌঁছাতে পারেন না প্রিয়জনদের কাছে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের সময় মহাসড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে। ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধ করতে হবে। চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে এবং যাত্রীদেরকেও সচেতন থাকতে হবে। এ ছাড়া ঈদের আগে পরিবহন খাতের নজরদারি বাড়ানো জরুরি।
প্রতিবছর যে পরিবারগুলো ঈদের আনন্দ হারিয়ে ফেলে প্রিয়জনের মৃত্যুতে, তাদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। কেবল সমবেদনা নয়, প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের উদ্যোগ।
ঈদ যেন আর কারো জীবনে কান্নার কারণ না হয়। ঈদযাত্রা যেন আর কারো জীবনের শেষ যাত্রা না হয়—এই প্রত্যাশা নিয়ে এখনই প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ। ঈদ হোক নিরাপদ, ঈদ হোক শান্তিময়।