ঈদের ছুটিতে সদরঘাটে ঘরমুখো মানুষের ভিড়
- জবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ০৭:৫৪ PM , আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫, ১০:৫৪ PM
ঈদুল আজহার ছুটিকে সামনে রেখে ঢাকার সদরঘাট নদীবন্দরে আবারও ফিরেছে পুরোনো চিত্র—যাত্রীদের কোলাহল, স্টাফদের হাঁকডাক, আর বাড়ি ফেরা মানুষের ভীড়। তবে এইবারের ভীড় যেন কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে মোড়া; একদিকে যেমন দেখা মিলেছে ঘরমুখো মানুষের তাড়াহুড়ো, অন্যদিকে নৌযাত্রার প্রতি কিছুটা অনীহাও চোখে পড়েছে।
সরেজমিনে বুধবার (৪ জুন) ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। কেউ আগেভাগে কাটা টিকিট হাতে নিয়ে লঞ্চে উঠছেন, কেউ কেবিনের টিকিট না পেয়ে হতাশ ভঙ্গিতে ডেকে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বরিশালগামী যাত্রী আনোয়ার আলী বলেন, “আমরা এসে শুনলাম কেবিনের টিকিট শেষ। ডেকেই যাবো। বাড়িতো যেতেই হবে।”
লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানান, কেবিনের টিকিটের জন্য আগাম চাহিদা বেশি থাকলেও এইবার আগের মতো উপচেপড়া ভীড় হয়নি। অনেক কেবিন টিকিট এখনো বিক্রি হয়নি। তবে যাত্রীদের চাপ বেশি দেখা যাচ্ছে ডেকে।
নৌপথে এবার ঈদের জন্য বিশেষ লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়নি। আগাম টিকিট বিক্রিতেও খুব একটা সাড়া পড়েনি বলে জানান লঞ্চ মালিকরা। এই বিষয়ে ঢাকা ইংল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ বলেন, “আমাদের প্রধান যাত্রী হচ্ছেন পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা। গার্মেন্টসে ছুটি শুরু হলে চাপ বাড়বে। এখনো সেটা পুরোপুরি শুরু হয়নি।”
লঞ্চ মালিকদের দাবি, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কপথে যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে গেছে, যার ফলে নৌপথে যাত্রী কমেছে। এছাড়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও খারাপ আবহাওয়াও মানুষের গ্রামে ফেরার আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে।
তবে যাত্রীর চাপ বাড়ার আশঙ্কা রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। সদরঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, “বর্তমানে ৩৮টি রুটে ১২০টি লঞ্চ রোটেশনে চলাচল করছে। পরিস্থিতি বুঝে ৩ জুনের পর অতিরিক্ত লঞ্চ নামানো হতে পারে। তবে ভাড়া বাড়ানো হয়নি।”
যাত্রীদের নিরাপত্তা ও যাত্রাসুবিধা নিশ্চিতে ঘাটে কঠোর তদারকি চলছে বলে জানান নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন। “যাত্রীদের যেন কোনো ধরনের ভোগান্তি না হয়, সে জন্য মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে।”
সদরঘাটের সামগ্রিক চিত্রের বিপরীতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন এবং বিভিন্ন বাস টার্মিনালে যাত্রীদের তুলনামূলক চাপ বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তবে এবার ভিন্ন দৃষ্টান্ত হিসেবে সেখানেও ভোগান্তি বা বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ খুব একটা পাওয়া যায়নি।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম জানান, “বিনা টিকিটের যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ ঠেকাতে কড়াকড়ি চেকিং চলছে। হকার বা ভবঘুরেদেরও স্টেশনে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।”
যাত্রাপথে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র হলেও সদরঘাটের ঈদযাত্রা যেন সময়ের সাথে বদলে যাওয়া যাত্রী-মানসিকতারই প্রতিচ্ছবি। একদল ছুটছে পরিবারের টানে, অন্যদল সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে—যাবে কি না যাবে। তার মাঝেও ডেকের নিচে বিছানো একটি চটের ওপর, অথবা একটি স্টিলের রেল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর চোখে স্পষ্ট একটি শব্দ— ফেরা।