ফুলবাড়ীয়ার ঐতিহাসিক সাক্ষী লাল চিনি, জিআই পণ্যের জন্য আবেদন

  © সংগৃহীত

প্রাচীন সভ্যতার সাক্ষী হয়ে এখনো টিকে আছে কৃষকের হাতে তৈরি লাল চিনি। যান্ত্রিকতার যুগে সাদা চিনির ব্যবহার সর্বক্ষেত্রে বেড়ে যাওয়ায় হুমকিতে পড়েছে লাল চিনি। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার পাহাড়ি লাল মাটিতে আবাদ করা আখের রস জ্বাল দিয়ে অতি প্রাচীনকাল থেকে কৃষকের হাতে তৈরি হয়ে আসছে লাল চিনি। এবার এসব চিনি প্রতি মণ লাল চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার টাকা মণ দরে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ১০৪ কোটি টাকা লাল চিনি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাচীন সভ্যতার কৃষি পণ্যকে জিআই পণ্যের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

জানা গেছে, ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার পাহাড়ি লাল মাটি-অধ্যুষিত কালাদহ, এনায়েতপুর, রাঙামাটিয়া, নাওগাঁও, বাকতা ও রাধাকানাই ইউনিয়নে একসময় প্রচুর পরিমাণ আখ আবাদ করা হত। আখমাড়াই মেশিনে আখের রস বের করে জ্বালঘরে জাল করার পর মাটিতে গর্ত করে তৈরি চুলায় কড়াই বসিয়ে রস জ্বাল দেওয়া হয়। রস পূর্ণ জ্বাল হওয়ার পর কড়াইসহ চুলা থেকে নামিয়ে কাঠের ডাং বা কাঠি আঞ্চলিক কথ্য ভাষায় ‘ডোভ’ দিয়ে বিরামহীন ঘুটতে থাকে, যতক্ষণ না শুকনো ধূলার মত আকার ধারন করে। আখের গুণগত মান খারাপ হলে ধুলার মতো না হয়ে গুটি গুটি আকার ধারণ করে। ধুলার মতো বা গুটির মতো যা-ই হোক, ফুলবাড়ীয়ার ভাষায় এটাই লাল চিনি।

চিনি তৈরি করার জন্য যে অস্থায়ী গৃহ নির্মাণ করা হয়, তাকে বলা হয় জ্বালঘর। দেখতে ধূসর খয়েরি হলেও সাদা চিনির বিপরীতেই হয়তো লাল চিনি নামকরণ।

স্থানীয় বয়স্ক ব্যক্তিদের মতে, প্রায় ৮০ বছর আগেও এই এলাকায় চিনি বলতে বর্তমান লাল চিনিকেই বোঝাত। কালের বিবর্তনে মেশিনে উৎপাদিত চিনি (ফুলবাড়ীয়ার মানুষের ভাষায় যা সাদা চিনি) প্রসার লাভ করায় অত্র এলাকায় উৎপাদিত চিনি হয়ে গেছে লাল চিনি। এখনো ফুলবাড়ীয়ার কোনো মানুষ চিনি প্রসঙ্গ উঠলে জিজ্ঞেস করে নেন, ‘লাল চিনি না সাদা চিনি?’

লাল চিনি মাড়াই মৌসুম শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসে, কার্যক্রম চলে চৈত্র মাস পর্যন্ত। মাড়াই মৌসুমে ওই এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।

লাল চিনি আবাদ করা পলাশতলী গ্রামের জামাল মিয়া জানান, আট কাঠা জমিতে আখ আবাদ করেছেন তিনি। এতে তার ৩২ মণ চিনি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

একই গ্রামের রশিদ বলেন, আখ আবাদ করে আমরা লাভবান হতে পারি না। কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করলে আমরা লাভবান হব। আমাদের উন্নত জাত সরবরাহ করলে আখ চাষ আরও আবার সম্ভাবনা রয়েছে।

লাল চিনি ক্রেতা আব্দুল কদ্দুছ বলেন, প্রতি মৌসুমেই আমার মতো অনেকেই লাল চিনি কিনে থাকেন। মৌসুম শেষে বিক্রি করলে বেশি লাভ পাওয়া যায়।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, কৃষকদের মধ্যে আখের নতুন জাত সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। জাত উন্নত হলে চিনির উৎপাদন আরও বেড়ে যাবে। ফলে কৃষক লাভবান হবে। আখচাষিদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হলে কৃষকরা আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হবেন। এবার আখ আবাদ হয়েছে ৬৫০ হেক্টর জমিতে।

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহামদ বলেন, ফুলবাড়ীয়ার লাল চিনিকে জিআই পণ্যের জন্য আমরা আবেদন করেছি। আমরা আশা করছি সামনের মিটিংয়ে লাল চিনি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।


সর্বশেষ সংবাদ