বই পর্যালোচনা: খালেদুর রহমান সাগরের ‘পুঁজির ভূমিকা’

  © টিডিসি ফটো

জগৎবিখ্যাত পণ্ডিত কার্ল মার্ক্স পুঁজিবাদী সমাজ বিশ্লেষণের এক অনন্য নাম। ইউরোপীয় পুঁজিবাদী সমাজের উত্থান এবং তার ক্রমবিকাশ আলোচনা করতে গিয়ে তিনি একের পর এক অতুলনীয় গ্রন্থ লিখেছেন। পৃথিবীর তাবৎ ইতিহাসে কার্ল মার্ক্সের ‘পুঁজি’ তাই বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত।

‘পুঁজি’ লেখা শেষ করে মার্ক্স যখন প্রকাশ মাইসনারের কাছে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি লিখেন, ‘আমি লন্ডন থেকে বুধবার স্টিমার দিয়ে ঝঞ্ঝাসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে শুক্রবার হামবুর্গে পৌঁছেছি। উদ্দেশ্য ‘পুঁজি’র প্রথম খণ্ডের পাণ্ডুলিপিটি মি. মাইসনারের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটি হল এমন এক ভয়ঙ্কর মিসাইল, যেটি এখনও পর্যন্ত বুর্জোয়াদের (জমির মালিকরাও এর অর্ন্তভুক্ত) মাথার উপর ছোঁড়া হয়নি’।

কার্ল মার্ক্স নিজেই যখন ‘পুঁজি’র গুরুত্ব নিয়ে অনেক আশাবাদী ছিলেন, যেখানে ‘পুঁজি’কে নিয়ে সারা বিশ্বে কম আলোচনা সমালোচনা হয়নি। মার্ক্স নিজে ২০০ বছর অতিক্রম করার পাশাপাশি তাঁর ‘পুঁজি’ গ্রন্থ প্রকাশিত হবার ১৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। বহুল আলোচিত এই গ্রন্থের অনুবাদ বিংশ এবং একবিংশ শতকের আগে পরে অন্যান্য ভাষার মত বাংলায়ও প্রকাশিত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে খালেদুর রহমান সাগর সাবলীল বাংলায় ‘পুঁজি’ গ্রন্থের তিন খণ্ডের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ ঢাকায় পাঠকদের জন্য হাজির করেছেন।

কার্ল মার্ক্সের তিন খণ্ডের পুঁজি বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে লেখক পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় টাকা এবং পণ্যের পরস্পরের সম্পর্ক এবং তাদের সঞ্চালন দিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। পড়তে গেলে বুঝা যায় লেখক অনুবাদের সময় অনেক পরিশ্রম করেছেন। মার্ক্সের ব্যবহৃত শব্দের যথার্থ অনুবাদ করতে গিয়ে লেখককে লম্বা সময় ধরে বাংলা ভাষার শব্দ সম্ভার নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন, যা বাংলা ভাষায় গ্রন্থ পাঠকদের জন্য অসীম আনন্দের।

পরবর্তীতে পুঁজির সঞ্চালন প্রক্রিয়া এবং সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার চক্র বিশ্লেষণে মার্ক্সিয় আলোচনা এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। কার্ল মার্ক্সের ‘পুঁজি’ গ্রন্থের জার্মান নাম ডাস কাপিটাল, যেটির প্রথম খণ্ড ১৮৬৭ সনে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের সম্পাদনায় ১৮৮৫-১৮৯৪ সনে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়।

এ ছাড়া কার্ল কাউটস্কি ‘থিয়োরি অফ সারপ্লাস ভ্যালু’ নামে আরো তিন খণ্ড বের করেন, যাকে রাশিয়ার প্রগ্রেস পাবলিকেশনস পূঁজির চতুর্থ খণ্ড নাম দিয়েছে। ‘পুঁজি’ গ্রন্থের সারসংক্ষেপ পাঠকদের সামনে হাজির করার সূত্র ধরে লেখক ২২ পৃষ্ঠার অতি মূল্যবান ভূমিকা লিখেছেন, যেটি আলোচ্য গ্রন্থের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দিক।

ভূমিকাতে এতো সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন যা কার্ল মার্ক্স অথবা তাঁর ‘পুঁজি’ সম্পর্কে অন্যান্য পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের আলোচনা সম্যকভাবে বুঝতে পাঠকদের সহায়তা করবে। গ্রন্থের শেষ ভাগে মার্ক্সের রাজনৈতিক অর্থনীতি পর্যালোচনা এবং পরিকল্পনা সহজভাবে বুঝার জন্য বহুমাত্রিক ছকের ব্যবহার করেছেন।

মহাদেশীয় দর্শন (Continental Philosophy) পড়তে আগ্রহী লেখক খালেদুর রহমান (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে Mao Sagor নামে যিনি অধিক পরিচিত) পূর্বে জন লক, টমাস হবস, ইমানুয়েল কান্ট, হেগেল, মিশেল ফুকো, এন্টনিও গ্রামসিসহ অন্যান্য বিখ্যাত গ্রন্থাকারদের নির্বাচিত অংশ অনুবাদ করেছেন।

সেইসাথে লেখক আগামীতে কার্ল কার্ক্স সম্পর্কিত উচ্চতর শ্রেণি পাঠোপযোগি গ্রন্থ লেখাতে মনোযোগ দিবেন বলে এই গ্রন্থের শুরুতে আভাস দিয়েছেন।

‘পুঁজির ভূমিকা’, খালেদুর রহমান সাগর
প্রকাশকঃ দ্যু প্রকাশন, মূল্যঃ ১৫০ টাকা।

রিভিউ লেখক: প্রভাষক, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস বিভাগ,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence