তপুর জীবনে আলো হয়ে আসে প্রিয়াঙ্কার ভালোবাসা

বুক রিভিউ
বুক রিভিউ   © টিডিসি ফটো

আমি তপু একটি কিশোর উপন্যাস। এটি মূলত এক সঙ্গীহীন কিশোরের দুঃসহ জীবনের গল্প। উপন্যাসের মূল চরিত্র আরিফুল ইসলাম তপু। সে-ই এই উপন্যাসের কথক চরিত্র। ডাক নামের মতো জীবনটাও খুব বেশি বড় নয়, সবেমাত্র ক্লাস এইটে পড়ে। কিন্তু এই ছোট্ট জীবনেই সে সাক্ষী হয়েছে বিভিন্ন তিক্ত অভিজ্ঞতার।

তপু যখন ক্লাস ফাইভে পড়তো তখন এক ভয়ানক দূর্ঘটনায় তার বাবার মৃত্যু হয়। অল্পের জন্য সে নিজে রক্ষা পায়। কিন্তু স্বামী হারানোর শোকে বিহ্বল তপুর মায়ের বদ্ধমূল ধারণা জন্মায় তপুই তার বাবার মৃত্যুর কারণ। ফলে তপু সাথে তার আচরণ হয়ে উঠে প্রচন্ড রুক্ষ। কারণে-অকারণে তপুকে মারধর করেন। ক্রমাগত ছেলেটি পেতে থাকে অনাদর, উপেক্ষা আর ঘৃণা।

তপুর কোনো বন্ধুবান্ধব নেই। মায়ের ভয়ে তার বড় ভাই ও বড় বোন ও একসময় মুখ ঘুরিয়ে নেই তপুর থেকে।শুধুমাত্র বাসার কাজের মহিলা দুলি খালাই তপুর প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা ঘায়ের দাগ, নোংরা কাপড়, উষ্কখুষ্ক চুলে এক দুর্বিষহ অবস্থায় তপু।

তার একাকীত্বের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক লিখেছেন-

‘‘আমি বুঝতে পারলাম এই পৃথিবীতে আমার
কেউ নেই, আমি একেবারে একা।আমার চোখের
পানি হঠাৎ করে শুকিয়ে গেলো।আমি বুঝতে
পারলাম যার চোখের পানির কোনো মূল্য নেই,
এই পৃথিবীতে তার থেকে হতভাগা আর কেউ নেই’’

কাছের মানুষগুলো দূরে সরে যাওয়ার সাথে সাথে লেখাপড়ারও অবনতি ঘটতে থাকে একসময়ের দুর্দান্ত মেধাবী ছাত্র তপুর। একসময় ক্লাসে প্রথম হওয়া ছেলেটির জায়গা হয়ে যায় ক্লাসের শেষের বেঞ্চে। সহপাঠী, শিক্ষকদের থেকেও আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে থাকে তপু। তাদের কাছে সে পরিচিত হয় চরম উশৃঙ্খল এক বখাটে ছেলে হিসেবে।

নিঃসঙ্গ তপুর এই দুঃসহ জীবনে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় প্রিয়াঙ্কা নামের অপরিচিত একজন মেয়ে। তার বন্ধুত্বের প্রভাবে সে বাঁচার আনন্দ ফিরে পায়। নতুন উৎসাহের সাথে আবিষ্কার করে হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য্য, লুকিয়ে থাকা স্বপ্নগুলো। অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্যের পরে নতুন করে আলোর দিকে ছুটতে থাকে তপু। প্রিয়াঙ্কা একসময় তপুকে বলে-

‘‘আমি তোর আম্মু হব, তোর ভাই হব, বোন হব,
তোর বন্ধু-বান্ধব হব- দেখিস তুই, খোদার কসম’’

বস্তুুত হয়েছিলোও তাই। তপুর নিঃসঙ্গ জীবনকে সর্বপ্রথম আবিষ্কার করে প্রিয়াঙ্কাই। বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে তপুর ভুলতে বসা প্রতিভাগুলো সম্পর্কে প্রিয়াঙ্কায় তাকে আবার সচেতন করে। তার অনুপ্রেরণাতেই হোঁচট খাওয়া কিশোর তপু করে স্বপ্নজয়। তপুকে অন্ধকার জীবন থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যায় প্রিয়াঙ্কার বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসা। প্রিয়াঙ্কা তাকে সাহায্যে করে তার প্রতিভার সঠিক বিকাশ ঘটিয়ে পৃথিবীর কাছে প্রমাণ করতে যে তপু আসলে একটা জিনিয়াস।

প্রিয়াঙ্কার মাধ্যমে সে গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে এবং দেশের বাঘা-বাঘা গণিতবিদদের তাক লাগিয়ে দেয় জটিল সমস্যার সমাধান করে। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট তপুকে স্বর্ণপদক দিলেও পরিবারের সদস্যদের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না। বাড়িতে মায়ের কাছে সে ঘৃণার পাত্রই রয়ে যায়। কিন্তু কাহিনীর শেষ পর্যায়ে এসে আবারো মায়ের সাথে তপুর পুনর্মিলন ঘটে। কিন্তু সে বড় অদ্ভুত এক পরিস্থিতিতে- যা ছিলো তপুর জন্য একই সাথে বড্ড আনন্দের আবার বড্ড দুঃখের।

সহজ ও সাবলীল ভাষায় রচিত এই উপন্যাসটি প্রত্যেকের মনে দাগ কাটবে। এই উপন্যাসটির শেষ দিকে এসে কান্না ধরে রাখতে পারবেন না মনে হয় কোনো পাঠক। ব্যক্তিগতভাবে বলতে, আমিও কেঁদেছি কিছু কিছু মুহুর্তে।

লেখক: শিক্ষার্থী, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence