মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে সুতাং নদে

  © সংগৃহীত

হবিগঞ্জের সুতাং নদে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ ও জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকদের যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সুতাং নদের আশপাশের হাওরগুলোতে বোরো ধান চাষে এ নদের পানি সেচকাজে ব্যবহৃত হয়। নদ ও হাওরের মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করছে, এ কথা বলাই যায়। এমনকি হাওরের ধানেও মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকার আশঙ্কার কথা বলছেন গবেষকেরা।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থায়নে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের মাধ্যমে গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে।

পাঁচ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট প্লাস্টিকের কণাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশ বিনষ্ট করার পাশাপাশি মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। প্লাস্টিক পণ্য তৈরি করা কারখানাগুলো যখন তাদের শিল্পবর্জ্য পরিবেশে ফেলে দেয়, তখন এর থেকে নির্গত কেমিক্যাল ও প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণাগুলো ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। এসব মাটিতে মিশে যাওয়ার ফলে উর্বরতা হ্রাস পায়। আর প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণাগুলো বাতাসের মাধ্যমেও বিভিন্নভাবে মানবদেহে প্রবেশ করে। এ মাইক্রোপ্লাস্টিককে খাবার ভেবে নদীর মাছ, ঝিনুক এমনকি সাগরের তিমিরাও গ্রহণ করে।

হবিগঞ্জের অন্যতম নদ হচ্ছে সুতাং। এ সুতাং নদের উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা। ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ সুতাং নদ হবিগঞ্জ সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, লাখাই ও চুনারুঘাট উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত। একসময় এই নদ এলাকাবাসীর যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল। এখনো বোরো মৌসুমে এই নদের পানি ব্যবহার করে কৃষিকাজ সম্পন্ন হয়।

তবে দেশের অন্যান্য নদ-নদীর মতো এই নদের অবস্থা আজ সংকটাপন্ন। এর জন্য দায়ী হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুর এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানাগুলো। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা এসব কারখানার বর্জ্য নদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী শৈলজুড়া খালের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে সুতাং নদ দূষিত করছে। পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে নদের তীর দিয়ে চলাচলও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দূষণের কারণে মৎস্যশূন্য হয়ে পড়েছে নদটি।

অন্যদিকে এই নদের পানি দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় নদ অববাহিকায় বিদ্যমান বিস্তীর্ণ হাওরের বোরো ফসলের সেচকাজে ব্যবহার করতে পারছেন না কৃষকরা। নদের পানি ব্যবহারকারীরাও পড়েছেন গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। আক্রান্ত হচ্ছেন চর্মরোগসহ নানা অসুখে। নদের পানির সংস্পর্শে আসা হাঁস, মুরগি ও গবাদিপশু মারা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলার শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, হবিগঞ্জের সুতাং নদসহ অন্যান্য খাল-বিলে শিল্পবর্জ্য ফেলায় পানি কুচকুচে কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নদের তলদেশে বর্জ্যের স্তর (প্লাস্টিক মাইক্রোবেডস) পড়ে গেছে। অসহনীয় দুর্গন্ধ ও দূষণের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গেছে। শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নদপারের লোকেরা। এ শিল্পবর্জ্যের বিষাক্ত কালো পানি সুতাং-বলভদ্র হয়ে এখন মেঘনা নদীতে গিয়েও পড়ছে।

সুতাং নদের পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ভারী ধাতুর (হেভি মেটাল) অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণাটিতে প্রধান গবেষকের দায়িত্বে আছেন হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. শাকির আহম্মেদ। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক ইফতেখার আহম্মেদও এই গবেষণায় যুক্ত আছেন। তারা নদের বুল্লা অংশ থেকে সুতাং পর্যন্ত কাজ করতে গিয়ে নদে কোনো জলজ প্রাণীর খোঁজে পাননি।

হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক মো. শাকির আহম্মেদ বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব পড়ার কারণে এ নদে এখন কোনো প্রজাতির মাছ নেই। এমনকি শামুক পর্যন্ত নেই। তারা ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়েছেন, সুতাং নদে মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব রয়েছে।

তারা আরও জানান, সুতাং নদ ঘেঁষে যতগুলো হাওর আছে, সেই হাওরের কৃষি সেচে সুতাং নদের পানি ব্যবহার করা হয়। সেই হাওরের ধানেও একই রকম মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব থাকার আশঙ্কা অনেক বেশি।

একই গবেষণায় যুক্ত প্রভাষক ইফতেখার আহমেদ বলেন, সুতাং নদের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করা পানি এবং মাছের নমুনায় বিভিন্ন রং ও আকারের মাইক্রোপ্লাস্টিকের ব্যাপক উপস্থিতি তারা পেয়েছেন। আরও নমুনা পরীক্ষার কাজ গবেষণাগারে চলমান আছে। মূলত বর্ষা ও শীতকালীন নদের পানির দূষণের মাত্রা এবং মাছ, পানি, সেডিমেন্টে (পলি) মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি, আকার, পরিমাণ নির্ণয়ের লক্ষ্যে গবেষণাটি পরিচালনা করছেন তারা। এসব দূষণের ফলে নদতীরবর্তী মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত  ঝুঁকি আছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence