চার লেন সড়ক নির্মাণে হারিয়ে যাচ্ছে বাকৃবির ঐতিহ্যবাহী জব্বার মোড়
- বাকৃবি প্রদায়ক
- প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৪ PM
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের আড্ডা, হাসি-আনন্দ আর প্রজন্মের স্মৃতিতে জড়িয়ে থাকা ‘জব্বার মোড়’ এখন বিলুপ্তির পথে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের চার লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেট থেকে ফসিল মোড় পর্যন্ত চলমান সংস্কারকাজে পরিবর্তন আসছে এই ঐতিহাসিক স্থানে। প্রজন্মের পর প্রজন্মের স্মৃতিবাহী এই মোড় হারিয়ে যেতে বসায় শিক্ষার্থী ও প্রাক্তনদের মনে নেমে এসেছে নস্টালজিয়ার আবেশ।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেট (কেবি কলেজ মোড়) থেকে ফসিল মোড় পর্যন্ত চার লেন বিশিষ্ট সড়ক নির্মাণের কারণে এই পরিবর্তন ঘটছে। প্রকল্পের অংশ হিসেবে জব্বার মোড় হয়ে যাওয়া সড়কের দুই পাশের দোকানগুলো স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মোড়ের পূর্ব পাশের দোকানগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামের সামনে, আর পশ্চিম পাশের দোকানগুলোকে সামান্য পেছনে সরিয়ে রাখা হবে।
এই মোড়ের অন্যতম পুরনো ও জনপ্রিয় খাবারের স্থান ছিল ‘জব্বার হোটেল’। হোটেলটির বর্তমান মালিক মাহবুব আলম, যিনি শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত ‘হাবিব’ নামে, বলেন, ‘আমি চার বছর ধরে জব্বার হোটেল চালাচ্ছি। চার বছর আগে দোকানটি নতুন করে গড়ে এখানে ব্যবসা শুরু করি। কিছুদিন আগে রাস্তার কাজের জন্য দোকান ভাঙতে হয়, এরপর এই নতুন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছি। এখানে এসেছি মাত্র দুই মাস হলো। শুরুতে তিন মাস সময় লেগেছিল সবকিছু গুছাতে, তখন আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমার ১৭ জন স্টাফেরও তখন অনেক কষ্ট হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে ব্যবসা এখনও পুরোপুরি জমে ওঠেনি, পরিচিতি তৈরি হতে সময় লাগছে। তবুও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার হোটেলে খেতে পছন্দ করে। তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। আমি চেষ্টা করি যেন তারা ভালো খাবার পায়, কারণ অনেকেই বাড়ি থেকে দূরে থাকে। যখন দেখি আমার হোটেলের খাবার খেয়ে অনেক শিক্ষার্থী জীবনে ভালো করছে, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ। আশা করি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা আরও ভালো হবে, আর জব্বার হোটেল আবারও শিক্ষার্থীদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত বলেন, “আমরা প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে যখন বাকৃবিতে আসি, তখনই সবাই বলত, ‘চলো, জব্বারের দিকে যাই’। এখন নতুন জায়গায় গেলে হয়তো সেই আগের আবহটা থাকবে না। তবু আশা করি, নতুন জায়গাতেও সেই আন্তরিকতা থাকবে।”
তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী জামি জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যের অংশ ছিল জব্বার থেকে সোহরাওয়ার্দী হলে যাওয়ার রাস্তাটি। কিন্তু রাস্তার গাছ কেটে সংস্কারের নামে সেই সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রশাসনের আরও বিবেচনাপ্রসূত হওয়া উচিত।
সময়ের স্রোতে পরিবর্তন অনিবার্য—নতুন ভবন গড়ে ওঠে, পুরনো রাস্তা বদলে যায়, জীবনযাত্রা নেয় আধুনিক রূপ। তবু কিছু জায়গা থাকে, যা কেবল স্থাপনা নয়, হয়ে ওঠে প্রজন্মের আবেগ আর স্মৃতির অংশ। জব্বার মোড় তেমনই এক নাম, যেখানে জড়িয়ে আছে অসংখ্য গল্প, বন্ধুত্ব আর আড্ডার উষ্ণতা। আজ সে মোড় বদলে গেলেও, এর স্মৃতি মুছে যাবে না। প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে, তাদের কথায় আর স্মৃতিচারণায় জব্বার মোড় বেঁচে থাকবে বাকৃবির ইতিহাসের এক অনবদ্য অধ্যায় হয়ে।