বাকৃবিতে নির্বাচন ছাড়াই ভেটেরিনারি ছাত্র সমিতি গঠন, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
- বাকৃবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ০৩:৫৩ PM , আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫, ১০:০০ AM
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদে নির্বাচন ছাড়াই ‘বাংলাদেশ ভেটেরিনারি ছাত্র সমিতি’র নতুন কমিটি গঠিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা মতামত গ্রহণ ছাড়াই একতরফাভাবে সদস্য মনোনীত করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। এ নিয়ে প্রতিবাদের মুখে ছাত্র সমিতির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের কমেন্ট সেকশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আরও অভিযোগ, গত কমিটির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠলেও সেটি নিয়ে কোনো তদন্ত বা পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আরিফুল ইসলাম, সহসভাপতি (ভিপি) হিসেবে মনোনীত হয়েছেন পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী মোরসালিন ও একই বর্ষের শিক্ষার্থী জুলফিকার হাসান অন্তর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
জানা যায়, প্রতিটি শিক্ষাবর্ষ থেকে অ্যাকাডেমিক ফলের ভিত্তিতে চারজন করে সিআর (শ্রেণি প্রতিনিধি) নির্বাচন করা হয়। পরে এসব শ্রেণি প্রতিনিধিদের সমন্বয়েই ছাত্র সমিতির কমিটি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেটেরিনারি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমরা আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে ব্যর্থ হয়েছি। একপ্রকার সিলেকশনের মাধ্যমেই ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন করা হতো। সমিতিতে যারা থাকবে, তারা যদি আমাদের ভোটে নির্বাচিত হয়, তাহলে তারা আমাদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। তারা আমাদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে। কিন্তু তথাকথিত এই ভাগ-বাটোয়ারার সমিতি কতটা ছাত্রদের কথা ভাববে, তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।’
আরও পড়ুন: রাবির প্রশাসনিক ভবনসহ ১২ স্থাপনার নাম পরিবর্তন
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভেটেরিনারি ছাত্র সমিতি যেহেতু একটি ছাত্র সমিতি, তাই সেটি হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখানে ছাত্রদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে দেন শিক্ষকেরা। এতে প্রতীয়মান হয়, ছাত্ররা শিক্ষকদের কাছে জিম্মি। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পরও এখানকার ছাত্ররা এখনো তাদের স্বাধীনতা ফিরে পায়নি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছাত্রলীগের আমলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার হরণ করে ছাত্র সমিতি গঠন করা হতো। জুলাই বিপ্লবের পরও সেই ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদী স্টাইলেই তথাকথিত ছাত্র সমিতি (যা আসলে শিক্ষক সমিতি বলা যায়) গঠন করা হয়েছে, যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই অনির্বাচিত ছাত্র সমিতিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। অতিদ্রুত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ছাত্র সমিতি গঠনের দাবি জানাচ্ছি।’
বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে নো পলিটিকসের সুযোগ নিয়ে আমাদের শ্রদ্ধেয় কিছু শিক্ষক, যারা ফ্যাসিবাদ আমলে বিরোধী দলের নেতিবাচক সমালোচনা করতেন এবং দলীয় কর্মসূচিতে যাদের কম সময়ই দেখা যেত, তারাই এখন গণতন্ত্রহীন বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যর্থ চেষ্টায় নিয়োজিত। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো নির্বাচন ছাড়াই ভেটেরিনারি ছাত্র সমিতি গঠন। ভেটেরিনারি ছাত্র সমিতি ইস্যুতে ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষেই রয়েছে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বাকৃবি শাখার সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। ছাত্ররা তাদের প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার অধিকার রাখেন। দ্রুততম সময়ে বর্তমান কমিটি বাতিল করে নির্বাচন আয়োজন এবং বিগত কমিটির দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
আরও পড়ুন: এপ্রিল-মে’র মধ্যেই নির্বাচন, জানালেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী
এ বিষয়ে বাকৃবি ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য যখন ছিলেন, তখন ছাত্ররাই দাবি করেছিল, মেধার ভিত্তিতে সব কিছু পরিচালনা করতে হবে। ওই সময়ের মিটিংয়ে আমি ছিলাম না। পরে আরেকটি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, আমাদের যে ছাত্র প্রতিনিধিরা থাকবে, তারা মেধার ভিত্তিতেই নির্বাচিত হবে। তখন কোটা বনাম মেধা আন্দোলন চলছিল। সেই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং শিক্ষার্থীদের দাবির ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভায় অ্যাকাডেমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যেসব অনুষদে শ্রেণি প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে মেধার ভিত্তিতে। অর্থাৎ মেধার ভিত্তিতে প্রতিটি শিক্ষাবর্ষ ও সেকশন থেকে একজন ছেলে ও একজন মেয়ে শ্রেণি প্রতিনিধি হবে। এটি সিন্ডিকেট সভার লিখিত সিদ্ধান্ত এবং তাদের মধ্য থেকেই ছাত্র সমিতি গঠন করতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের মতামত না নেওয়ার বিষয়ে ডিন বলেন, ‘তখন তো আসলে ছাত্ররাই মেধাভিত্তিক চাইছিল। ছাত্ররা যে কখন কী বলছে, আমি বুঝতে পাচ্ছি না। সিন্ডিকেট মিটিং অনুযায়ী, মেধার ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে, এটার লিখিত আমার কাছে আছে। আমাদের একটা কমিটি ছিল। ওই কমিটি ২০ জন শ্রেণি প্রতিনিধির মধ্যে থেকে যারা মোস্ট সিনিয়র, তাদের মধ্য থেকে ভিপি-জিএস বাছাই করা হবে, যাতে সবাই তাদের মান্য করে।’
আরও পড়ুন: বিশ্বখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে এক সংগ্রামী যাত্রা
ফেসবুকের কমেন্ট সেকশন বন্ধের বিষয়ে ডিন আরও বলেন, ‘আমি কোনো পোস্ট করিনি। সম্ভবত সিআরদের মধ্য থেকে কেউ করতে পারে। আমি জানি না।’
আগের কমিটির অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বাহানুর রহমান বলেন, ‘আগের কমিটির ভিপি-জিএসকে তো আমরা এখন পাচ্ছি না। তবে আমাদের যে শিক্ষক কোষাধ্যক্ষ ছিল, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিল-ভাউচারের হিসাব করেছি। আমরা যেটুকু দেখেছি, ছাত্রদের ব্যাপকভাবে খরচের সুযোগ নেই।’