৬৩ বছরে পদার্পণ করল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

আজ ১৮ আগস্ট।  ১৯৬১ সালের এই দিনে প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণ এশিয়ায় কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। গৌরব ও মর্যাদার ৬২ বছর পার করে ৬৩ তে এসে দাড়িয়েছে বাকৃবি। মানসম্পন্ন উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ব্যবস্থার নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে দেশে কৃষি উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব বহনে সক্ষম তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কৃষিবিদ, প্রাণিবিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও কৃষি প্রকৌশলী তৈরির লক্ষ্যেই  প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়।

ময়মনসিংহ শহর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে এক হাজার ২০০ একর জায়গায় অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এটি প্রকৃতিকন্যা নামে পরিচিত। সবুজ গাছ-গাছালিতে ভরা ১২০০ একরের এই ক্যাম্পাস সবাইকে আকৃষ্ট করে। তাই বার বার দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন এই সবুজ চত্বরে।

কৃষিবিজ্ঞানের সকল শাখা এর আওতাভুক্ত। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের কৃষির উন্নয়নে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কাজ করে চলেছে এখানকার গ্র্যাজুয়েটরা।

বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা থেকে শুরু করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রেখে তৈরি করেছে এক অতুলনীয় ইতিহাস। দেশের কৃষিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক গবেষক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ। গত ৬২ বছরে বাকৃবির রয়েছে অসংখ্য গৌরবময় অর্জন। যার মধ্যে বাউ ধান-৩, ডেঙ্গুর সিরোটাইপ নির্ণয় প্রযুক্তি, মানুষ ও পশুর ব্রুসেলোসিস রোগের জীবাণু শনাক্তকরণ, ইলিশ ও ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জিন রহস্য উন্মোচন, ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিকের বিকল্প উদ্ভাবন, হিমায়িত ভ্রুণ হতে ভেড়ার কৃত্রিম প্রজনন, শুকনো মৌসুমে বোরো ধান চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবন অন্যতম।

এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও মাছের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি আবিষ্কার, শস্য ও পশুর একাধিক জাত উদ্ভাবনের মতো কৃষির সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে অনন্য উচ্চতায় এখন বাকৃবি।
যার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭, ২০১৮ ও ২০২১ সালে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। অর্জনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন বাকৃবির সকল শিক্ষক শিক্ষার্থী। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু এই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছেন। এর ফলে দেশের কৃষিতে এসেছিল এক আমূল পরিবর্তন। ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই বিশ্ববিদ্যালয় আরো হাজার বছর একই অবস্থানে থাকুক, দেশের কৃষিকে আরো সমৃদ্ধ করুক, এবং প্রতিবছর ঈর্ষনীয় সংখ্যক দক্ষ কৃষিবিদ তৈরি করুক সবার এমনই প্রত্যাশা।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাকৃবি প্রশাসন। সকালে র‍্যালি, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, গাছের চারা বিতরণ, ব্রহ্মপুত্র নদে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ করা হবে। এরপর সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন 'শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবিত প্রযুক্তি' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রর্থনা, হল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও পালিত হবে।

প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন,  দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামগ্রিক চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর আজ বহুগুণে বেড়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে এর মর্যাদা ও সুখ্যাতি। নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণের গৌরবগাঁথা নিয়ে আমাদের প্রাণপ্রিয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬২ বছরের গৌরবোজ্জ্বল পথ চলা। বৈশ্বিক নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে আমরা এগিয়ে চলছি। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে গুণগত মানসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট বড়ই প্রয়োজন। গুণগত মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান ও উন্নত জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। আর সেই লক্ষ্যেই গত ছয় দশক ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিথযশা শিক্ষক ও গবেষকবৃন্দ নিরলসভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করে চলেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ