বাকৃবিতে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অফিসার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার আমজাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। 

মঙ্গলবার (২০ জুন) প্রাণনাশের হুমকির ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবার লিখিত আবেদন করেন ভুক্তভোগী ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আফরিনা মুস্তারি।

লিখিত অভিযোগে ড. আফরিনা মুস্তারির দাবি করেন, ১৯ শে জুন ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় তিনি প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে উপাচার্যের বাসভবনে যান। তখন উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা বাইরে স্লোগান দিচ্ছিলো। ওইসময় অফিসার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আবুল বাসার আমজাদসহ সবাই শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থিত হয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আমজাদ ড. আফরিনা মুস্তারি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পূর্বাকে সবার সাম্মুখে প্রাণনাশের হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। 

আবুল বাসারের এরূপ আচরণে দুই শিক্ষক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে আমজাদের আচরণ শিক্ষক সমাজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে বলে অভিযোগ বলা হয়েছে। এই ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষক সমাজের মান মর্যাদা রক্ষা করার অনুরোধ জানিয়েছেন ড. মুস্তারি। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে আমলে নেওয়ার জন্যে রেজিস্ট্রারকে অনুরোধ জানিয়ে সুপারিশ করেন ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ও উপাচার্য (চলতি দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আউয়াল। 

এদিকে বুধবার (২১ জুন) ঘটনাটি মিথ্যা দাবী করে মানহানির জন্য বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য (চলতি দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত) বরাবর পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন বাকৃবি অফিসার পরিষদ। অফিসার পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে জমা দেয়া অভিযোগ পত্রে বলা হয়, ড. পূর্বা ইসলাম এবং ড. আফরিনা মুস্তারি অফিসার পরিষদের এই নেতাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যাদি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি অভিযোগ পত্র প্রেরণ করেছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, এই দুই শিক্ষক ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা নিয়োগের ভাইবা পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে নিয়ম ভঙ্গ করে ভাইবা বোর্ডে প্রবেশ করে এবং ভাইবা বন্ধ করার চেষ্টা চালায়। এছাড়াও তারা বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মানববন্ধন এবং সাংবাদিক সম্মেলন করে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯ জুন আনুমানিক দুপুর ১.৪৫ টার সময় ড. পূর্বার বিশ্বস্ত সহচর ড. মুস্তারির নেতৃত্বে আন্দোলনরত ভেটেরিনারী অনুষদের কিছু সংখ্যক ছাত্র রেজিস্ট্রার মহোদয়ের বিরুদ্ধে টিএসসি চত্বরে অশোভনীয় শ্লোগান দিয়ে রেজিস্ট্রারকে ভিসির বাসভবনে নিয়ে যায়।

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, অফিসার পরিষদের সভাপতি বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সাথে কথা বলারত অবস্থায় ড. মুস্তারি কোমলমতি ছাত্রদের অফিসার পরিষদ কার্যালয়ে আক্রমণ করার জন্য উস্কানি প্রদান করলে অফিসার পরিষদ কার্যালয়ের সামনে সভাপতি এবং ছাত্রদের মধ্যে এক পর্যায়ে বাকবিতন্ডা  শুরু হলে ভেটেরিনারী অনুষদের ছাত্র সমিতির সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে তারা সবাই ভিসি বাসভবনে গিয়ে ভিসির উপস্থিতিতে ওই অনুষদের সিনিয়র শিক্ষকদের সম্মুখে রেজিস্ট্রারের সাথে অনাকাঙ্খিত ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান করে।

সমাধানকৃত ঘটনাকে অন্য দিকে প্রবাহিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য ড. পূর্বার উস্কানিতে ড. মুস্তারি অফিসার পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ পেশ করে। এই ষড়যন্ত্রের সাথে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচী দেওয়া হবে বলে জানায় অফিসার পরিষদ।

প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল বাসার আমজাদ বলেন, ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত ছিলাম না। আমি অফিসার পরিষদ কার্যালয়ে ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন এসব অভিযোগ করা হয়েছে।

অফিসার পরিষদের সভাপতি খায়রুল আলম নান্নু বলেন, আমরা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত দিয়েছি। যদি তাদের বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। আমজাদ ঘটনার সময় অফিসে আমার সাথেই ছিলো।

এদিকে, উস্কানির অভিযোগ অস্বীকার করে ড. পূর্বা বলেন, তাদের অভিযোগপত্রের প্রথম বাক্যই মিথ্যা। কারণ আমি কোনো অভিযোগপত্র দেইনি। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর একটি ট্রেনিং প্রোগ্রামের জন্যে আমি রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার ছুটিতে ছিলাম। তাই ঘটনার দিনও আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম না। আমাকে এর মধ্যে কেনো জড়ানো হলো আমার সেটি বোধগম্য হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, ভাইবা বোর্ডে আমি কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা করিনি। আমার উপর হামলার বিচারের জন্য তদন্ত কমিটির পরিস্থিতি নিয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তিনি সমাধানও করেছেন। ছাত্রলীগ সভাপতির সাথে আমার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি করেছে। সেটি অফিসার পরিষদের কাজ নয়। ‘আমি’ আসলে তাদের মনের ভয়। তাই সব জায়গায় তারা আমাকে টানে।

এ বিষয়ে বাকৃবির উপাচার্য (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, শিক্ষকদের সাথে অফিসারের এমন বিষয় শোভনীয় নয়। আমরা দুইজনেরই দরখাস্ত পেয়েছি। ইদের ছুটির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরের সাথে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence