আশ্বাসেই মেয়াদের শেষ পথে বাকৃবি উপাচার্য
- বাকৃবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৩, ০৭:০০ PM , আপডেট: ১৯ মে ২০২৩, ০৮:৪৭ PM
আগামী ৩০ মে পূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসানের চার বছরের মেয়াদ। এই চার বছরে আছে আশ্বাস, কাজ ও অভিযোগের গল্প। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন এবং মানোন্নয়নের দিক দিয়ে তিনি ছিলেন পিছিয়ে। তবে তিনি ব্যক্তি হিসেবে সফল হয়েছেন। অর্জন করেছেন কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের (এআইপি) সম্মাননাও। এমনটাই বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
তারা জানিয়েছেন, উপাচার্য ড. লুৎফুল হাসান ৭ বছর পর বাকৃবিতে আয়োজন করেন ৮ম সমাবর্তন। বাকৃবির ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্র্যাজুয়েট নিয়ে এটিই ১ম সমাবর্তন ছিলো। তবে রাষ্ট্রপতি না আসায় সমাবর্তনটি ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। ছাত্রীদের আবাসিক সমস্যা দূরকরণে তিনি ২টি হলের কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া সংস্কার এবং বর্ধিতও করেছেন কিছু হল। দীর্ঘদিন পর ৪ অনুষদের শিক্ষা কারিকুলামে উন্নয়ন করেন তিনি।
অধ্যাপক লুৎফুল হাসান উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৯ সালের ৩০ মে। তিনি এখন চার বছর দায়িত্বের একেবারে শেষের দিকে রয়েছেন। আগামী ৩০ মে উপাচার্য হিসেবে তার দায়িত্ব শেষ হবে।
আরও পড়ুন: লোডশেডিংয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বাকৃবির নাম 'ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়'
সংশ্লিষ্টরা জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের আশ্বাস দেন তিনি। উপাচার্য হওয়ার পরেই তিনি বারবার বলে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন এবং সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে পাল্টে দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত ধারা। বিশ্বের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে ধরবেন অনন্য উচ্চতায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক সম্পর্ককে করবেন বন্ধুসুলভ।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ফটকের নকশা সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত ফটক তৈরির কাজ শুরু হয়নি। তিনি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষার্থীদের সহজে চাকরি পাওয়ার জন্য করতে চেয়েছিলেন জব ফেয়ার। কিন্তু সেটিও আজ পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের সেবার মান নিশ্চিত করতে তিনি সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তবে চারটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও বর্তমানে সচল অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা তিনটি কিন্তু সর্বদা সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত থাকে মাত্র একটি অ্যাম্বুলেন্স। শিক্ষার্থীদের উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের কথা থাকলেও সকল আবাসিক হলেই চলছে কচ্ছপগতির ইন্টারনেট, বিশ্ববিদ্যালয়কে র্যাগিং এবং মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস হিসাবে গড়ার কথা বললেও নিয়মিতই চলছে শিক্ষার্থীদের মাদক সেবা, বেড়েছে নিরাপত্তা সংকট।
একাধিক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, করোনায় শিক্ষাক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য বা কাটিয়ে ওঠার জন্য অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও বাকৃবি কোনো ধরনের পরিকল্পনা হাতে নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন যেকোনো সমস্যা সমাধানে বারবার তাদের ব্যর্থতা প্রকাশ করে চলেছে।
একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি দুটি বাড়ি ব্যবহার করছেন। কিন্তু বিধিমালা অনুযায়ী উপাচার্য হিসেবে তিনি শুধু উপাচার্যের বাসভবন ব্যবহার করতে পারবেন। দুটি বাড়িতে অতিরিক্ত কর্মচারী এবং নিরাপত্তাকর্মী ব্যবহার করে তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।
আরও পড়ুন: কৃষিগুচ্ছের ফলের পাঁচ মাসেও ক্লাস শুরু করতে পারেনি বাকৃবি
শিক্ষকরা অভিযোগে আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে একটি শিষ্টাচার ছিল তিনি সেই শিষ্টাচারের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। উপাচার্য হিসেবে তিনি সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান করার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে থাকেন ক্যাম্পাসের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের তার কার্যালয়ে খুব কম সময় অতিবাহিত করেছেন। কার্যালয়ের কাজগুলো তিনি করেন উপাচার্যের বাসভবনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তাকর্মী সংকট থাকলেও, এমনকি নিয়োগের সার্কুলার প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত সে নিয়োগ সম্পূর্ণ হয়নি। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগকে বেশি প্রশ্রয় এবং গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি মাত্র ৭ থেকে ১০ শতাংশ সম্পন্ন করে এখন এপিআই র্যাঙ্কিংয়ে বাকৃবি এখন সবার পেছনে রয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় করোনার সময় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করেছে। সে জায়গায় বাকৃবির সেরকম দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।
এছাড়া নিয়োগে এবং শিক্ষা সংক্রান্ত অনিয়ম, উপাচার্যের একসঙ্গে দুটি বাসভবন ব্যবহার ও ডিপিপি বাস্তবায়নে ব্যর্থতাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে বাকৃবি উপাচার্যসহ প্রশাসনে নিয়োজিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছ্বতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশ। এতে বলা হয়, বাকৃবির চিরচারিত প্রথাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাখা হলো একটি মাত্র কমিটি। যারা কিনা বাছাই, প্রশ্ন প্রণয়ন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও অংশগ্রহণ করবেন।
আরও পড়ুন: মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ বাকৃবি শিক্ষার্থীরা, উৎপত্তিস্থল কচুরিপানা-আবদ্ধ জলাশয়
এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য আবেদনপত্রের সংখ্যা ছিল প্রায় দু’হাজারের কাছাকাছি। অনেক প্রার্থী একাধিক পদে আবেদন করার পরও এ সংখ্যা দেড় সহস্রাধিকের কাছাকাছি। কিন্তু পরীক্ষার জন্য কার্ড পেয়েছে মাত্র সাতশ জন। এই যে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী কার্ড পেলেন না তার ন্যূনতম যোগ্যতার মাপকাঠি কি ছিল- গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের এ প্রশ্নের জবাবও দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুল হাসান বলেন, আমি ১ম থেকে চেষ্টা করেছি মৌসুমি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ রাখতে। এই ৪ বছরে কোনো মৌসুমি শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মৌসুমি শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আর্থিক ক্ষতি হতো। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আর্থিক সংকট নেই।
উপাচার্য হিসেবে তার সাফল্য তুলে ধরে অধ্যাপক লুৎফুল হাসান আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ অনুষদের শিক্ষা কারিকুলামে পরিবর্তন এনেছি। যা বিশ্ব মানের। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন। এ বিষয়ে খুব শিগগিরই একনেক নতুন একটি বাজেট পাস হবে।