সমস্যা, হতাশা আর ডেঙ্গু জয় করে যেভাবে মেডিকেলে প্রথম শান্ত

জাহাঙ্গীর আলম শান্ত
জাহাঙ্গীর আলম শান্ত  © সংগৃহীত

২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন নরসিংদীর সন্তান ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজের কৃতী শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম শান্ত। গত ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ৯১.২৫ নম্বর পেয়ে জাতীয় মেধা তালিকার শীর্ষে ওঠেন তিনি। শান্তর রোল নম্বর ২৪১৩৬৭১।

রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ বছর পরীক্ষায় মোট পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ফল প্রকাশের পর সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন শান্ত।

অনুভূতির শুরুতেই তিনি মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে শান্ত বলেন, ‘ফার্স্ট হওয়ার পর সবার আগে আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া। আল্লাহ চাইছেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সবচেয়ে ভালো লাগছে, আমার পরিবার খুশি। আমি বাবা-মাকে গর্বিত করতে পেরেছি।’

শান্তর শিক্ষাজীবনের ভিত্তি গড়ে ওঠে নরসিংদীর বেলাবো উপজেলায়। তিনি বারৈচা রেসিডেন্সিয়াল মডেল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য ঢাকায় এসে তেজগাঁওয়ের সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি হন। পরিবার ছেড়ে মেসে থেকে পড়াশোনা করাটা ছিল তার জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন: মেডিকেল-ডেন্টালের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৬৬.৫৭ শতাংশ

কলেজ জীবনের শুরুতে শান্তর লক্ষ্য ছিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়া। তবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে একটি প্রশ্নব্যাংক সমাধান করতে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেও ভালো করার সক্ষমতা তার রয়েছে। সেখান থেকেই তার লক্ষ্য বদলে যায়।

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় শান্ত ছিলেন অত্যন্ত কৌশলী ও শৃঙ্খলাবদ্ধ। বিশেষ করে মোবাইল ফোন ব্যবহারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন তিনি। শান্ত বলেন, ‘মোবাইল আমার ফোকাস নষ্ট করছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিই, প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল আমার কাছে থাকবে না।’ তিনি নিজের ফোনটি বাসার এক পরিচিত আন্টির কাছে রেখে দিতেন এবং কেবল জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করতেন।

পড়াশোনার সময়সূচি প্রসঙ্গে তিনি জানান, সকালে পড়তেই তিনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তার ভাষায়, ‘আমি সকালের স্টুডেন্ট। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮–৯টা পর্যন্ত পড়লে পড়াগুলো সবচেয়ে ভালো মনে থাকে।’

শান্তর সাফল্যের পথ মোটেও সহজ ছিল না। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, অক্টোবরে শান্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ১০–১২ দিন পড়াশোনার বাইরে থাকতে হয়। এতে তিনি সাময়িকভাবে হতাশ হয়ে পড়লেও দ্রুত মানসিক শক্তি ফিরে পান।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে একটু ডিপ্রেসড হয়েছিলাম। পরে ভাবলাম, আল্লাহ যেহেতু এটা দিয়েছেন, নিশ্চয়ই এর ভেতর কোনো কল্যাণ আছে। ওই সময় যা পড়তাম, হয়তো সেটাই পরীক্ষায় আসত না।’

পরীক্ষার হলে শান্ত ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। প্রশ্ন তুলনামূলক সহজ মনে হওয়ায় তিনি ১০০টি প্রশ্নেরই উত্তর দাগান। শান্ত বলেন, ‘চান্স পাইলে পাইলাম, না পাইলেও সমস্যা নাই, এ মনোভাবে আমি শুধু প্রশ্নেই ছিলাম। বের হয়ে মিলিয়ে দেখি, প্রায় ৯২ নম্বরের কাছাকাছি কারেক্ট।’

নিজের সাফল্যের পেছনে বাবা-মায়ের দোয়া ও বন্ধুদের সমর্থনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন শান্ত। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধুরা বলতো, তারা যখন আমার বাসায় যেত, দেখতো আমার মা নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া করছে। এটা শুনলেই আমার ভেতরে অন্যরকম শক্তি আসতো।’

তিনি আরও স্মরণ করেন তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও চাচা শামীম স্যারের কথা, যিনি শান্তর চান্স পাওয়ার আশায় নফল রোজার মানত করেছিলেন। বন্ধুরাও পরীক্ষার সময় তার জন্য কোরআন খতম ও দোয়া করেছিলেন, যা তাকে মানসিকভাবে দৃঢ় রাখে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে শান্ত জানান, তিনি একজন অনকোলজিস্ট বা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হতে চান। তার ভাষায়, ‘ক্যান্সার বিষয়টা আমাকে খুব টানে। আল্লাহ কবুল করলে অনকোলজিস্ট হতে চাই।’

সবশেষে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শান্ত বলেন,  ভর্তির পড়াশোনা এইচএসসি পর্যায়েই গুছিয়ে শেষ করা জরুরি। তিনি বলেন, ‘একাডেমিক স্ট্রং থাকলে অনেকটা এগিয়ে থাকা যায়। জীবন থেমে থাকার নয়। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে, যার আল্লাহর ওপর ভরসা, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence