পড়াশোনায় মন নেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের

দফায় দফায় লকডাউন ও করোনা প্রকোপ বাড়ায় বারবার পিছিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ
দফায় দফায় লকডাউন ও করোনা প্রকোপ বাড়ায় বারবার পিছিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ  © সংগৃহীত

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে হয়তো এতদিনে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা রাখার কথা ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের। নানান জল্পনা-কল্পনা শেষে গেল বছর এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ার বিকল্পধারায় মূল্যায়ন করে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয় এসব শিক্ষার্থীদের। এইচএসসি ফলাফলের প্রায় আট মাস পেরিয়ে গেলেও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ব্যতীত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব হয়নি।

দফায় দফায় লকডাউন ও করোনা প্রকোপ বাড়ায় বারবার পিছিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ। যথাসময়ে পরীক্ষা না হওয়ায় একদিকে যেমন বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে অন্যদিকে অনিশ্চয়তা যেন পিছু ছাড়ছে না ভর্তিচ্ছুদের।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনার শুরুর দিকে অনলাইন ক্লাস ও পড়াশোনায় ব্যপক আগ্রহ থাকলেও দীর্ঘদিন বন্ধে পড়াশোনার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। বারবার ভর্তি পরীক্ষা পেছানোয় প্রস্তুতিতে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। পরিবারের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও অনিশ্চয়তায় পড়াশোনার হাল ছেড়ে কেউ কেউ আবার কর্মক্ষেত্রে ঢুকে পড়েছেন।

এদিকে পরীক্ষা না হওয়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন ছেড়ে অনেকেই আবার পাড়ি জমাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। হতাশা ও মানসিক চাপে আত্নহত্যার ঘটনাও এখন নিয়মিত হয়ে উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে অবিভাবকরাও আছেন চরম দুশ্চিন্তায়।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার এ দুঃসময়ে সব শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ পড়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের ভেঙে পড়লে চলবে না। করোনা একটি বৈশ্বিক সমস্যা, এটি স্থায়ী হবে না। পড়াশোনার হাল ধরে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। সেই সাথে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা আমলে নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

চট্টগ্রাম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী শেখ মাইনুর রহমান বলেন, করোনা মহামারীর শুরু থেকেই এক প্রকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি আমরা। ক্লাসে গিয়ে পড়া কিংবা পরীক্ষা দেওয়া এগুলো কেমন তাও ভুলে যাচ্ছি। সংকটময় পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস অপরিহার্য হলেও সঠিক পরিবেশের অভাবে শিক্ষার্থীরা ক্রমশ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

মাইনুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার মত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যেখানে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা দিয়ে নিজের অবস্থান যাচাই এবং প্রতিযোগিতাটা সামনে থেকে আঁচ করার কথা, সেখানে আমাদেরকে ঘরে বসে অনলাইন পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে যাচাই করতে হচ্ছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী হিসেবে এই পরিস্থিতিতে হতাশাটাই সবচেয়ে বেশি কাজ করছে, বারবার পরীক্ষার তারিখ পেছানোয় সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

দেলোয়ার হোসেন নামে এক ভর্তিচ্ছু বলেন, দিন দিন হতাশা বাড়ছে। প্রায় ১৮ মাস পেরিয়ে গেলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে না। দীর্ঘ ছুটি এখন বিষাদে রূপ নিয়েছে। করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের শুরুর দিকে পড়াশোনার সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও এখন ইচ্ছা-আগ্রহ একেবারেই নেই। বারবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা পেছানোয় আমার মতো অনেক শিক্ষার্থীই এখন পড়াশোনার সাথে সম্পৃক্ত নেই। ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন চরম শঙ্কিত আমরা।

তাহমিদ লিয়াম নামে আরেক ভর্তিচ্ছু বলেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে বা হচ্ছে সেটি ভবিষ্যতে পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব কিনা আমার জানা নেই। এইচএসসি উত্তীর্ণ হওয়ার প্রায় ১ বছর হতে চললেও এখনো উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হতে পারিনি। দীর্ঘদিন বন্ধে যেমন মানসিক সমস্যায় ভুগছি তেমনি ভবিষ্যৎ নিয়েও চরমভাবে শঙ্কিত। একটা রুটিন কিংবা পরীক্ষার চাপ থাকলে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বাড়তি গতি আসে। কিন্তু বারবার পরীক্ষার দিনক্ষণ পরিবর্তন ও অনিশ্চয়তার ফলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ধীরে ধীরে একেবারেই উঠে যাচ্ছে।

আরমান তালুকদার বলেন, করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত। একজন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার আগে যে উদ্যমী এবং যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলো এখন তার ছিঁটেফোঁটাও নেই বললেই চলে। বারবার ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ পরিবর্তন ও নীতিনির্ধারক কর্তৃক যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে সবাই এখন হতাশায় আছে।

শ্রাবণী নাথ নামে এক ভর্তিচ্ছু বলেন, কারখানার দরজা খোলা, কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা। ভর্তি পরিক্ষা কবে হবে? আদৌ কারো জানা নাই। বারবার ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পেছানো এবং সেইসাথে বারবার প্রস্তুতি বারবার নাজেহালের শিকার হচ্ছি আমরা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন ছেড়ে অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীরা কি করবে?

সম্প্রতি তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ‘আঁচল ফাউন্ডেশন’র একটি জরিপে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। সংস্থাটির গবেষণা বলছে, কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে তরুণদের মধ্যে মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতা ৬০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে গেছে। এছাড়া মহামারীর সময়েই আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছেন ২১ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ-তরুণী।

শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, করোনা মহামারির আঘাত শিক্ষার্থীদের জীবনে একদিকে যেমন বিষন্ন করে তুলছে অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বিষন্নতার চরম পর্যায়ে এসে তারা মনে করছে কিই বা আর হবে? এমন মনোভাব। অর্থাৎ স্বাভাবিক জীবনের ছন্দপতন শিক্ষার্থীদের ভুগিয়ে তুলছে।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে পরিবারের করণীয় সবচেয়ে বেশি। প্রত্যেক অভিভাবককে সন্তানকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার কাজ করতে হবে। কারণ যেহেতু এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা, সবাই একই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। এই সমস্যাটি চিরদিন থাকবে না। মনে রাখতে হবে শিক্ষা মানেই কিন্তু মানুষ হিসেবে সম্পদে রূপান্তর হওয়া। অর্থাৎ মানুষ যেন সমাজে বোঝা না হয় সেজন্যই কিন্তু শিক্ষা।

শিক্ষাবিদ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, করোনার এ সময়ে শিক্ষার্থীদের হতাশা, অবসাদ, ক্লান্তি, একঘেয়েমি এসব থেকে বাঁচাতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে পরিবারকে। প্রত্যেক পরিবারে সন্তানের সাথে সহযোগিতা মূলক আচরণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মনকে চাঙ্গা, প্রাণবন্ত এবং যুদ্ধ জয়ের মানসিকতা তৈরি করতে পারলে সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence