এপ্রিলের আগে পুরোপুরি শুরু হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা
- শিউলী রহমান
- প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:৫২ AM , আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:৩৬ PM
করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অটোপাস দিয়ে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা এখনই শুরু হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা শুরু হবে আগামী এপ্রিল থেকে। সে হিসেবে এপ্রিলের আগে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ভর্তি কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অন্যান্যবারের মতো এবারও মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। তবে দু’একটি বিশ্ববিদ্যালয় বিচ্ছিন্নভাবে এর আগেই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি শুরু হতে পারে আগামী এপ্রিলে। প্রায় সাড়ে ১০ হাজার আসনের বিপরীতে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, এপ্রিলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে পরীক্ষা হবে। অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২ এপ্রিল এমবিবিএসের পরীক্ষা এবং ৩০ এপ্রিল ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় দেশের তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যাচ্ছে না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। গত সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বুয়েটকে ছাড়াই রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) এবার প্রকৌশল ও প্রযুক্তি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বুয়েট আসবে না। তাদের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানতে পেরেছি। তবে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে তিন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সভায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেটি লিখিত আকারে জানানো হবে। বুয়েটের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেটিতে স্বাক্ষর করলে তা জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
অন্য তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। তবে এখনো তাদের পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ হয়নি। বুয়েটও ভর্তি পরীক্ষার তারিখ জানায়নি। সাধারণত মেডিকেলের পরই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসেবে এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এছাড়া সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও আগের মতোই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। এবার এতে নেতৃত্ব দেবে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. গিয়াসউদ্দিন মিয়া বলেন, মেডিকেল ও বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার পরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হয়। এবারও তা হতে পারে। এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহেই সভা করার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।
আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও। তবে তারা এখনও পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেনি। তবে মেডিকেল, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হতে পারে। এরমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগীয় শহরগুলোয় পরীক্ষা নেবে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে।
অপরদিকে দেশের ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক (জিএসটি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা নেবে। পরীক্ষার দিনক্ষণ নির্ধারণে বৈঠকে বসছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও নীতিনির্ধারকরা। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমলেই এ পরীক্ষার আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে সূত্র জানায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং জিএসটি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘দেশের করোনার প্রাদুর্ভাব না কমানো পর্যন্ত এই পরীক্ষা আয়োজন করা যাবে না। সেক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট দিনক্ষণ আপাতত বলা যাচ্ছে না। তবে বিয়য়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।’
জিএসটি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলনা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এ গুচ্ছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, এপ্রিলের আগে ভর্তি পরীক্ষা হবে না। এ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতেই এক-দেড় মাস সময় লাগবে। এ ছাড়া রমজান মাসের ছুটিও রয়েছে। অপর এক উপাচার্য বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।
এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে অনুযায়ী, এবারও তাদের স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হবে। তবে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে এপ্রিলের আগেই ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে আগামী ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের (বিইউপি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও খুলনায় একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিইউপির জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর কবির। তিনি বলেন, ঢাকার বাহিরে ক্যান্টনমেন্ট সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে এ পরীক্ষা নেওয়া হবে। বিস্তারিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।
বিইউপির ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ প্রকাশিত হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) থেকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন শুরু হয়ে চলবে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি ওয়েরসাইটে যোগ্যপ্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপী সাইন্স ও টেকনোলজি অনুষদ এবং আটর্স ও সোস্যাল সাইন্স অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
পরদিন অনুষ্ঠিত হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি সিকিউরিটি এন্ড স্ট্রাটেজিক অনুষদ এবং বিজনেস স্ট্যাডিজ অনুষদের পরীক্ষা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও খুলনায় একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে ওই নোটিশে বলা হয়েছে।