আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে শঙ্কা

ভর্তি পরীক্ষার্থী
ভর্তি পরীক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের ভোগান্তি লাঘব ও আর্থিক ক্ষতি কমাতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। সরকারের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রম করেছে তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে না পারায় আগামী শিক্ষাবর্ষে এ ভর্তি প্রক্রিয়া চালু রাখা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিগত গুচ্ছ ভর্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা, সময়ক্ষেপণ, উপাচার্যদের সিদ্ধান্তহীনতা, ভর্তিতে নানা জটিলতা ও হয়রানি বন্ধ করতে না পারায় অনীহা তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকসহ দায়িত্বশীলদের। এছাড়া সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের কারণে ভেঙে যেতে পারে শিক্ষার্থীদের বহুল প্রত্যাশার গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা। এ ভর্তি প্রক্রিয়া চালু রাখতে হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে হবে বলে মনে করেন ইউজিসি ও গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিরোধিতা না করলে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেই একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হত। তবে ঠুনকো অজুহাতে অধ্যাদেশের খসড়া আটকে দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াই আটকে দেওয়া হয়েছে। এটি চালু করতে হলে শিক্ষামন্ত্রীকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব হবে না—ইউজিসির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা

গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া যেভাবে চলছে সেভাবেই এটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান জানিয়ে ইউজিসি সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. হাসিনা খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতি বছরই গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। তবে আমরা এই প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা চালিয়ে যেতে চাই। শিক্ষার্থীদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে হচ্ছে না। আর্থিকভাবেও তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন না। লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে এবং তাদের অভিভাবকরা উপকার পাচ্ছেন। কাজেই এই প্রক্রিয়া বাতিলের সুযোগ নেই।

ভর্তি পরীক্ষার্থী

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অবশ্য সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছে থাকতে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতি। ফলে সরকারের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মোট ২৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। 

ইউজিসি ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যেতে চেয়েছিল। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় ইউজিসিতে জরুরি সভা ডাকা হয়। ওই সভায় উপাচার্যরা স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, ‘ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) অথবা কোনো একটি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আগামীতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে হবে। এছাড়া সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ায় সব বিশ্ববিদ্যালয় না আসলে এই পদ্ধতির ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে যাবেন বলে সাফ জানিয়ে দেন উপাচার্যরা।

শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি লাঘব করতে হলে একক ভর্তি পরীক্ষার বিকল্প নেই। আগামী শিক্ষাবর্ষে এটি চালু রাখতে হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে—অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ইউজিসি

এ বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির আহবায়ক এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী অথবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা ছাড়া আগামী শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে না। শিক্ষামন্ত্রীকে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে গুচ্ছ পদ্ধতি ভেঙে যেতে পারে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির তুমুল বিরোধিতার পরও প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনার কারণেই ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে একটি কাঠামো তৈরি করতে না পারলে এবার সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়া থমকে যাবে। ক্ষতির সম্মুখীন হবেন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকেরা।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তিরা বলছেন, গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সমিতি আগ্রহী নয়। তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বেশি আগ্রহী। গুচ্ছ কিংবা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু রাখতে হলে এনটিএ কিংবা কোনো একটি কাঠামো দ্রুত দাড় করাতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর

এদিকে একক ভর্তি পরীক্ষার কাঠামো তৈরি করতে দুটি কমিটি কাজ করছে বলে জানা গেছে। একটি কমিটি পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করছে। আর একটি কমিটি নীতি নির্ধারণী বিষয়গুলো দেখছে। পরীক্ষা মূল্যায়নে গঠিত সাব কমিটি একাধিকবার সভা করেছে। একটি খসড়া মূল্যায়ন নীতিমালাও তৈরি করেছে এই কমিটি। আগামী ২ জুলাই ফের সভা ডেকেছে এ কমিটি।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইউজিসির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিরোধিতা না করলে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেই একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হত। তবে ঠুনকো অজুহাতে অধ্যাদেশ আটকে দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াই আটকে দেওয়া হয়েছে। এটি চালু করতে হলে শিক্ষামন্ত্রীকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব হবে না।

একক ভর্তি পরীক্ষার কাঠামো এবং পরীক্ষা পদ্ধতি ঠিক করতে বর্তমানে দুটি কমিটি কাজ করছে জানিয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি লাঘব করতে হলে একক ভর্তি পরীক্ষার বিকল্প নেই। আগামী শিক্ষাবর্ষে এটি চালু রাখতে হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence