গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কেন অনাগ্রহ, কেন আগ্রহ?

ভর্তি পরীক্ষার্থী ও ইউজিসি লোগো
ভর্তি পরীক্ষার্থী ও ইউজিসি লোগো  © ফাইল ফটো

প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন দেশের বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা প্রদানে বর্তমানে দেশে ৫৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত। 

তবে পরিসংখ্যান বলছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট (স্নাতক) প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য যে পরিমাণ আসন রয়েছে তার চেয়েও অধিক শিক্ষার্থী প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করছেন। তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিভাগে আসন নিশ্চিতের জন্য এসব শিক্ষার্থীকে অবতীর্ণ হতে হচ্ছে ভর্তি যুদ্ধে। কিন্তু এখানেও রয়েছে দীর্ঘদিনের নানা ভোগান্তির অভিযোগ। 

“সমন্বয়হীন ভাবে চলছে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা : ইবি শিক্ষক সমিতি”

‘পূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়াই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার এই কার্যক্রম চলতে পারে না। ইউজিসি বিষয়টি কেন চাপিয়ে দিচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারছি না। অপরিকল্পিত এই পদ্ধতির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে।’ - ড. তপন কুমার জোদ্দার, সাধারণ সম্পাদক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে যাতায়াতের ভোগান্তি, অর্থ অপচয়, সময় অপচয়, আর অব্যবস্থাপনার শিকার হতে হচ্ছে তাদের। ফলে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দৌড়ঝাঁপের এই ফিরিস্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগেই ঝরে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। যাতায়াতের ভোগান্তি এবং থাকার জায়গার সংকটের কারণে ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেও কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেন না অনেকেই। দীর্ঘদিনের এসব অনিয়ম আর ভোগান্তিই যেন অলিখিত সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছিল। কেননা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটিতেই উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হতো। বিষয়টির কোনো যৌক্তিক সমাধান না থাকায় মুখ বুজে সহ্য করতে হতো শিক্ষার্থীদের। অভিভাবকদেরও ভর্তি পরীক্ষার এই মৌসুমে সন্তানের যাতায়াত নিয়ে উদ্বিগ্নতার মধ্যে থাকতে হতো। সবমিলিয়ে বিষয়টি একদিকে যেমন ছিল সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল অন্যদিকে ছিল পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ।

মাসুম খান নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী জানান, কারণ, তার সময়ে (২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ) তিনি মাত্র ৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। যদি কোনোভাবে এই তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না হতো, তবে বাধ্য হয়ে তাকে জাতীয় কিংবা বেসরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হত। কারণ, একজন শিক্ষার্থী চাইলেও ৪-৫টি বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার সময়-সুযোগ পান না। 

এমন অবস্থায় এসব নানামুখী সমস্যার কার্যকরী সমাধানের জন্য শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের পক্ষ থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে অর্থাৎ সমন্বিতভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানানো হয়। তখন বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজগুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতির সফল প্রয়োগের নজির থাকায় বিষয়টি আরও জোরালো হয়। পরে এমন দাবি আলো দেখে ২০২০ সালে। বিশ্ববিদ্যালয় মজ্ঞুরী কমিশন (ইউজিসি) দেশের ২০টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেই দেশের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হতে পেরেছিলেন শিক্ষার্থীরা।  প্রথমবারের মতো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার এমন আয়োজনে বেশ কিছু সমস্যা, সমন্বয়হীনতা থাকলেও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।  ফলশ্রুতিতে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে সম্মতি জানায়। বর্তমানে দেশের ২২ টি বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করছেন।

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো—
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

গুচ্ছে আলো ফোটার আগেই ভাঙনের সুর 

গুচ্ছের আলো ফোটার আগেই সমন্বিত এই পরীক্ষায় দেখা দিয়েছে ভাঙনের সুর। প্রথম সারির দুই বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা ও প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগে অসন্তোষ জানিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতেই পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। গত ২ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতি এবং ১৭ মার্চ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতি এই বছর থেকেই অর্থাৎ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য সমন্বিত পরীক্ষায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত কথা জানিয়েছেন। 

 

“শিক্ষকতা করতে এসেছি, ইনকাম করতে আসিনি: জবি শিক্ষক সমিতি”

‘গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত আমার ব্যক্তিগত নয় বরং এটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল  শিক্ষকদের কথা। এখানে সাতশজনের ও বেশি শিক্ষক তাঁদের যে মতামত দিয়েছে শিক্ষক সমিতি সেটিই তুলে ধরেছে।’ - অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম, সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

 

গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নয় বরং থেকেই সংকট সমাধানের দাবি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের 

এমন অবস্থায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিনের যে ভোগান্তি ও অর্থের অপচয়সহ নানা সমস্যা ছিল সেগুলো কিছুটা হলেও নিরসন হতে শুরু করেছে। তাই গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নয় বরং সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার এই কার্যক্রম চালু রেখেই সামনে আসা সমন্বয়হীনতা ও  সংকট দূর করা হোক। এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন এমন কয়েকজনের সাথেও কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের।

সামিউল আযম নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে আমরা বেশ আশাবাদী। কেননা এই উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি, অর্থ ও সময়ের অপচয় কমেছে। এটি যুগোপযোগী একটি পদক্ষেপ। তবে কিছু বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি আরো সচেতন হন তবে এই উদ্যোগের সুফল সবাই পাবেন। যে সকল সংকট এবং আশঙ্কার কথা  বলা হচ্ছে সেগুলো দূর করলে গুচ্ছ পদ্ধতি শিক্ষাব্যবস্থায় ভালো জায়গা তৈরি করবে বলেও করে মন্তব্য করেন এই শিক্ষার্থী। 

তারেক আজিজ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সমন্বিত পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। তবে অবশ্যই এটি প্রশ্নমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। অসন্তোষ অথবা সংকট নিয়ে যেন কোন ধরনের পিছুটান তৈরি না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। সমস্যা থাকলে অবশ্যই সেটি সমাধান হওয়া প্রয়োজন। 

 

তবে অভিভাবক মহলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি নিয়েও রয়েছে অসন্তোষ। রবিউল ইসলাম নামের এক অভিভাবক বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিরা যদি আন্তরিক হন তবে এই সমস্যাটির সমাধান হতে পারে। এত দীর্ঘসূত্রিতার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম চলতে পারে না।

আরও পড়ুন : গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা যথাসময়ে, জুলাইয়ে ক্লাস: শাবিপ্রবি উপাচার্য

আরেক অভিভাবক মানিকগঞ্জের আব্দুল জাব্বার বলেন, একটি পদ্ধতি শুরু হওয়ার পর কয়েকদিনের মধ্যেই যদি আবার ভেস্তেও যায় তাহলে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। গুচ্ছ পদ্ধতি শুরু থেকে যদি কোন সংকট তৈরি হয়ে থাকে তাহলে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেই তার সমাধান করা হোক। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের অর্থের অপচয় অনেকাংশেই কমে এসেছে। আমরা শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে তাতে ভর্তি পরীক্ষা সংশ্লিষ্টদের আয়ের অনুপাত বেশি থাকে। তাই হয়তো অনেকেই এ পরীক্ষায় অনাগ্রহ প্রকাশ করছে।  তবে এ বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

যা বলছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মজ্ঞুরী কমিশন (ইউজিসি) 

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মজ্ঞুরী কমিশন (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাছাড়া কেন দুটি বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে তার নির্দিষ্ট কারণও জানা যায়নি। বৈঠকে উপাচার্য কোন বিরোধিতা করেননি বরং স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপস্থাপিত বিষয়গুলো বলেছেন।

 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে গত ২০ মার্চ ইউজিসি-ভিসিদের সভা অনুষ্ঠিত হয় ।

তিনি বলেন, আগে ভর্তি পরীক্ষার সময় একই দিনে অথবা পরপর সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হত। এতে ভর্তিচ্ছুদের অনেককে বিপাকে পড়তে হয়েছে। এটি অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কষ্ট কমানোর জন্যই এই পদ্ধতি (গুচ্ছ পদ্ধতি) বের করা হয়েছে।  আমরা বলেছি, পরীক্ষা নিতে গিয়ে যে সকল সমস্যা সামনে  এসেছে সেগুলো সমাধান করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যে কারণে গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) 

কেন সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার এই পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম । তিনি বলেন, গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ আমরা বলিনি- কথাটি ঠিক নয়। আমাদের অনেকগুলো বিষয় তুলে ধরেছি। এরমধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা, মানসম্মত শিক্ষার্থী না পাওয়া, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না পাওয়া অন্যতম। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদ দিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতির লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। আর এসব কথা আমার ব্যক্তিগত নয় বরং এটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের কথা। এখানে সাতশজনেরও বেশি শিক্ষক তাঁদের যে মতামত দিয়েছেন; শিক্ষক সমিতি সেটিই তুলে ধরেছে।

“গুচ্ছে কোন সংকট নেই, চমৎকার চলছে : শাবিপ্রবি ভিসি”

‘কোন সংকট নেই, কোন সমস্যা নেই। চমৎকারভাবে সবাইকে নিয়ে কাজ চলছে। এগুলো খোঁড়া যুক্তি। সমন্বিত পরীক্ষার ফলে ছাত্র শিক্ষক উভয়েরই কষ্ট কমেছে।’ - অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ উপাচার্য, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় কমে যাওয়ায় অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে এমন গুঞ্জন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুচ্ছে আমরা আগের তুলনায় বেশি টাকা পেয়েছি। একটি কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে বিশ্ববিদ্যালয় আমরা শিক্ষকতা করতে এসেছি। ইনকাম করতে আসিনি। আমাদের অনেক শিক্ষক বিনা পয়সায় এই পরীক্ষা নিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবনাও দিয়েছেন। গুচ্ছ পদ্ধতিতে আগের তুলনায় বেশি টাকা পাওয়ার পরও আমাদের শিক্ষকরা গুচ্ছের প্রতি আগ্রহী নয়। 

গুচ্ছ থেকে কেন বের হতে চাইছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়?

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা যে সুনির্দিষ্ট কারণ দেখাতে পারছি না এটি ইউজিসি কীভাবে বলবে? কারণ ইউজিসি তো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কখনো কথা বলেননি। তাঁরা সবগুলো মিটিং করেছেন উপাচার্যদের সাথে। আমরা শিক্ষক সমিতির মিটিংয়ে স্পষ্টভাবেই জানতে চেয়েছি ইতোপূর্বের দীর্ঘসূত্রিতা কাটাতে সামনের শিক্ষাবর্ষ থেকে কী ধরনের সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? তাঁরা কিন্তু বলেছেন, কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বরং সামনে তারা পদক্ষেপ নেবেন। প্রস্তুতি ছাড়াই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার এই কার্যক্রম চলতে পারে না। ইউজিসি বিষয়টি কেন চাপিয়ে দিচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারছি না। 

আরও পড়ুন : গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ইউজিসি-ভিসিদের সভায় যে সিদ্ধান্ত হলো

অপরিকল্পিত এই পদ্ধতির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, টেকনিক্যাল কমিটিও বলতে পারছে না তারা কী করবে? কেননা তারাও এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পায়নি। আমরা অবশ্যই চাই শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমে আসুক। তবে নিঃসন্দেহে সেটি একটি সুন্দর উপায়ে হতে হবে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির দীর্ঘসূত্রতার কারণে নামহীন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও স্বাবলম্বী হয়ে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রেই ১ম বর্ষে ভর্তির আগেই  প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষা মানসিক বিপর্যস্ত অবসাদ গ্রস্থতা তৈরি হয়েছে আমরা সব মিলিয়ে বলতে চাই অবশ্য একটি সুন্দর পদ্ধতির মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হতে হবে। 

 ‘সংকটের বিষয়টি ভিত্তিহীন, বানোয়াট :  শাবিপ্রবি ভিসি’

শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে  ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কাজ চলমান রয়েছে। পরীক্ষা ঘিরে সংকট এবং সমন্বয়হীনতার বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন,  এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কোন সংকট নেই, কোন সমস্যা নেই। চমৎকারভাবে সবাইকে নিয়ে কাজ চলছে। এগুলো খোঁড়া যুক্তি। সমন্বিত পরীক্ষার ফলে ছাত্র শিক্ষক উভয়েরই কষ্ট কমেছে। এখন একটি সুন্দর প্রক্রিয়ায় সব কাজ চলেছে। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বানোয়াট উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সব সংকটের কথা লেখা হচ্ছে। যথাসময়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ