এইচএসসি: ইতিহাস ১ম পত্রের গুরুত্বপূর্ণ ১০ প্রশ্ন
- আলো আরজুমান বানু
- প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১০:৪৯ AM , আপডেট: ১৮ জুন ২০২৫, ০৬:৫১ PM
আগামী ২৬ জুন থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র ৭ দিন বাকি। এই অল্প সময়ে মাত্র ১০ টি প্রশ্ন সমাধান করার মাধ্যমে ইতিহাস প্রথম পত্রের সিলেবাস রিভিশন করা সম্ভব।
১. অন্ধকূপ হত্যা কি?
উত্তর: ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা হলওয়েল প্রচারণা চালায় যে, নবাব সিরাজউদ্দৌলার আদেশে ১৪৬ জন ইংরেজ বন্দীকে ১৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪.১০ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট ছোট একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল। এতে ১২৩ জন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। বাকি ২৩ জন কোন ভাবে বেঁচে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে এই কাহিনি মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়। একেই অন্ধকূপ হত্যা বলা হয়।
২. পলাশীর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
উত্তর: ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন ৫০টি কামান, ৩৫ হাজার পদাতিক, এবং ১৫ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে মুর্শিদাবাদের ২৩ মাইল দক্ষিণে ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশী নামক প্রান্তরে ইংরেজ বাহিনীর সাথে যে যুদ্ধ হয় তাই পলাশীর যুদ্ধ নামে পরিচিত। এতে প্রধান সেনাপতি মীর জাফর সহ রাজ পরিবারের অনেকেই যড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।এই যুদ্ধে পরাজয়ের পর বাংলা প্রায় দুই শত বছরের ইংরেজ দাসত্বে চলে যায়।
৩. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কী?
উত্তর: ১১৭৬ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৭৭০ সালে বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। যা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। কোম্পানির শাসনামলে রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত উৎপীড়নমূলক দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলায় মন্বন্তর দেখা দেয়। দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা কোম্পানির হাতে থাকায় তারা অন্যায় ভাবে জনগণের উপর অধিক খাজনা আরোপ করে। পর পর দু'বছর অনাবৃষ্টির কারনে ফসল নষ্ট হয়ে গেলে দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয়।
৪.লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন? এর মূলনীতি কী?
উত্তর:১৯৪০ সালের ২৩ শে জুন লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশনে বাংলার নেতা ও প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক বিখ্যাত লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এতে বলা হয় যেকোন শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা এদেশে কার্যকর বা মুসলমানদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না যদি এটি নিম্ন বর্ণিত মূল নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত না হয় ।
ক. ভৌগোলিক দিক থেকে সংলগ্ন এলাকাগুলোকে প্রয়োজনীয় রদ বদলের মাধ্যমে পৃথক অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
খ. ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে এ ধরনের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা সমূহে স্বাধীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন করতে হবে।
গ.এভাবে গঠিত স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের অঙ্গরাজ্যগুলো থাকবে স্বশাসিত ও সার্বভৌম । লাহোর প্রস্তাবে আরো বলা হয় যে, সর্বক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন স্বার্থ ও অধিকার রক্ষাকল্পে সংবিধানে প্রয়োজনীয় রক্ষাকবচ রাখতে হবে। প্রকৃতপক্ষে আঞ্চলিক স্বাধিকার ,আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সার্বভৌমত্ব অর্জনই ছিল লাহোর প্রস্তাবের মূল বক্তব্য।
৫. আলীগড় আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য কী?
উত্তর:মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে প্রগতিশীল ভাবধারা প্রসারের উদ্দেশ্যে স্যার সৈয়দ আহমেদ আলীগড় আন্দোলন পরিচালিত করেন। তৎকালীন মুসলমান সম্প্রদায়ের শোচনীয় অবস্থা থেকে তাদেরকে পরিত্রাণ করে সরকার ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে ব্রতী হন।
৬.তমদ্দুন মজলিস কী? কেন গঠন করা হয়েছিল?
উত্তর:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আবুল কাশেম এর নেতৃত্বে 'তমদ্দুন মজলিস 'গঠিত হয়েছিল। এ সংগঠনের উদ্যোগে ১৯৪৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর ভাষা আন্দোলনের প্রথম পুস্তিকা 'পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু 'প্রকাশিত হয়। এই সংগঠনের উদ্যোগেই ভাষা আন্দোলন কে রাজনৈতিক রূপদানের জন্য 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ 'গঠিত হয়েছিল মূলত তমদ্দুন মজলিস ছিল ভাষার দাবিতে ঘটে ওঠা প্রথম সংগঠন।
৭. মৌলিক গণতন্ত্রের ধারণা
উত্তর:মৌলিক গণতন্ত্র এক ধরনের সীমিত গণতন্ত্র । এতে কেবল কিছু নির্দিষ্ট লোকের জাতীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিকার ছিল ।জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের এই নতুন ধরনের নির্বাচন কাঠামো চালু করেন। মৌলিক গণতন্ত্র অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানের ৪০ হাজার এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ৪০ হাজার প্রতিনিধি জনগণের প্রতি নির্বাচিত হতে পারেন। এতে জনগণের ভোটাধিকার সীমিত হয়ে পড়ায় এই ব্যবস্থা ব্যর্থ হয় ।
৮. ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা
উত্তর:আইয়ুব খানের ১০ বছরব্যাপী দমননীতি শোষণ ও নিপীড়ন নির্যাতন পূর্ব পাকিস্তানিদের বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। ১১ দফা ঘোষণার পর ছাত্র আন্দোলন তুঙ্গে উঠে। ১৯৬৯ সালের ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে রাখে ।পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ২০শে জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে মিছিল বের হয়। পুলিশ মিছিলে গুলি করলে মারা যান ছাত্র ইউনিয়নের আসাদুজ্জামান। শহীদ আসাদুজ্জামান এর মৃত্যুর পরপরই তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় ক.২১ জানুয়ারি ঢাকায় হরতাল খ.২২ শে জানুয়ারি শোক দিবস ও গ. ২৩ শে জানুয়ারি মশাল মিছিল। ২৪শে জানুয়ারি পূর্ব ঘোষিত হরতালে ঢাকা শহরের সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।
৯. মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের জন্য তৎকালীন বাংলাদেশের বিন্যাস
উত্তর:মুক্তিযুদ্ধ সঠিকভাবে পরিচালনা ও সাফল্য লাভের জন্য সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়েছিল। এজন্য দেশকে এগারোটি সেক্টরে ভাগ করা হয় ।এছাড়া ৬৪ টি সাব-সেক্টর সহ তিনটি ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হয়। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে শত্রু মুক্ত করে।
১০.ভেটো ক্ষমতা কী?
উত্তর: জাতিসংঘের ক্ষমতাধর পাঁচটি সদস্য রাষ্ট্রের বিশেষ ক্ষমতাকে ভেটো ক্ষমতা বলা হয়। সদস্য রাষ্ট্র গুলো হচ্ছে আমেরিকার, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া। এই পাঁচটি রাষ্ট্র বিশেষ ক্ষমতাবলে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাতে পারে। আবার কোন রাষ্ট্র সদস্য হতে চাইলে তাকে জাতিসংঘের সদস্য করা না করার ব্যাপারে মত প্রদান বা বাধা দান করতে পারে। জাতিসংঘের পাঁচটি রাষ্ট্রের এই বিশেষ ক্ষমতাই হলো ভেটো প্রদানের ক্ষমতা।
লেখক:
আলো আরজুমান বানু
সহকারী অধ্যাপক,
ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়