ছুটি! ছুটি! ছুটি!

গ্রাফিক্স ছবি
গ্রাফিক্স ছবি

‘ছুটি! ছুটি! ছুটি! মনের খুশি রয়না মনে হেসেই লুটোপুটি। ঘুচল এবার পড়ার তাড়া অঙ্ক কাটাকুটি, দেখব না আর পণ্ডিতের ঐ রক্ত আঁখি দুটি। আর যাব না স্কুলের পানে নিত্য গুটি গুটি, এখন থেকে কেবল খেলা কেবল ছুটোছুটি।’- বাঙালি শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায় মনে হয় শৈশবে থাকতে এ কবিতাটি লিখে রাখছিলেন। আবু জাফর সিকদার খেলার সাথীদের নিয়ে ছুটির দিনের পরিকল্পনা করছেন এভাবে-

আয়রে ছুটে আয় বন্ধুরা
সাঙ্গু নদীর চর
বালি দিয়ে বাঁধব মোরা
স্বপ্ন সুখের ঘর ।
কনে সাজবে বউ
নিতে আসবে বর ।

ছুটির দিনে মনের সুখে
নাইব, গাইব, বলব ছড়া
খিদে পেলে থাকবে পাতে
কোরমা পোলাও দইবড়া ।

আয়রে ছুটে আয় বন্ধুরা
সাঙ্গু নদীর চর ।

কবি, সাহিত্যিকদের লেখায় শৈশবের ছুটির দিন কাটানোর যে স্মৃতিগুলো ভেসে আসে তা বাংলার কিশোর-কিশোরীদেরই স্মৃতি। রাফি ঢাকা শহরের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করেছে। সে তার বন্ধু নিলয়কে বলছে, ‘এবারের ডিসেম্বর আসতে কেন যেন বেশ সময় লেগেছে।’ আগে থেকে তার পরিকল্পনা গ্রামের বাড়ি বরিশালে গিয়ে সহপাঠীদের সাথে নদ-নদী, ক্ষেতের মাঝে ছুটে বেড়াবে। নদী থেকে মাছ ধরবে, ঘুড়ি ওড়াবে, সকালে শীতের পিঠা তো থাকবে। আরও কতই কিছু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অপেক্ষা আর নয়।

শাহিনের সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দেয়ার আগে থেকে বাবা-মাকে রাজি করে ফেলছে গ্রামের বাড়ি সিলেটে যাওয়ার। বাবা সরকারি চাকরিজীবী। তার ডিসেম্বরে ব্যস্ততা বেশি। তাই মাকে নিয়ে সে গ্রামের বাড়ি যাবে। পরীক্ষা শেষে দাদুর বাড়ির পাশের সিয়ামের সাথে মোবাইলে প্রতিদিন কথা হচ্ছে শাহিনের। গ্রামে গেলে কি করবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

শিমু ও পায়েল। শিমু সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। পায়েল প্রাথমিক সমাপনীতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবার প্রশংসায় ভাসছে। বাবা-মা দু’জনই চাকরিজীবী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের দেখা পাওয়া শিমু ও পায়েলের ভাগ্যে জুড়ে না। এছাড়া এ সময় তারাও স্কুল, কোচিং ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে। তবে এখন ডিসেম্বর মাস। সবার স্কুল, কোচিং বন্ধ। শিমু ও পায়েলের বন্ধদের অনেকে গ্রামে আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে গেছে। তাই তাদের হাতে এখন প্রচুর সময়। টিভি দেখা, ভিডিও গেম খেলা, নিজেদের মাঝে খুনসুটি, হুটোপুটি সবই চলে। কিন্তু এভাবে প্রতিদিন আর তেমন ভালো লাগে না।

সন্ধ্যায় বাবা-মা যখন ফিরে অভিযোগের ফর্দ নিয়ে হাজির দু’জনই- ‘বন্ধু রাহেল দাদুর বাসায় গেছে, তানিশা আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়েছে, পিংকি নাচ শিখছে। বাসায় একা দম বন্ধ হয়ে আসছে। কিছু ভালো লাগে না আমাদের নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাও। তোমরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাক সবসময়।’ এভাবে সমানতালে বকে যাচ্ছে দুজনেই।

সন্তানের এ বয়সটা মানসিক বিকাশের সময়, স্বপ্ন দেখার সময়, নিজেকে মেলে ধরার সময়- এই বয়সে এসে আপনার সন্তান যেন হোঁচট না খায় তার ব্যবস্থা তো বাবা-মাকেই করতে হবে। ভাবতে হবে ছুটির দিনগুলোসহ প্রিয় সন্তানের অবসর কতটা অর্থবহ এবং আনন্দময় করে তোলা যায়। শত ব্যস্ততা থাকলেও সন্তানের জন্য সময় বের করে নিতে হবে এবং অর্থবহভাবে সময়টা কাটাতে হবে তার সঙ্গে। এর জন্য চাই পরিকল্পনা এবং আপনার পরিকল্পনা আপনার সন্তানের মতো করেই হতে হবে। অন্যেরটা নিয়ে এসে আপনার সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ মানুষ মাত্রই তার পৃথক সত্তা, তার মনোজগৎ বা ভালোলাগা, মন্দলাগাও আলাদা। তাই সন্তানদের তাদের মত করে ভাবুন। একটু সময় বের করে ছুটির দিনগুলোকে যথার্থ আনন্দঘন করার চেষ্টা করুন। তাদের নিয়ে একটু ঘুরে আসতে পারেন ছেলে-মেয়েদের পছন্দের স্থান থেকে। আপনার সন্তানের মনোজগৎ তৈরিতে সবচয়ে বড় প্রভাবক হতে পারেন আপনিই। ‍

যদি কোন কারণে সন্তানদের নিয়ে ঘুরে আসা সম্ভব না হয় তাহলে বইয়ের জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। নাচ, গান, আবৃত্তি বা ছবি আঁকার মতো সুকুমারবৃত্তি বিকাশের খোলা আকাশকে আপনার সন্তানের সঙ্গী করে দিন। দেখবেন ওর আকাশটাও রঙিন হয়ে উঠছে, অর্থবহভাবেই আনন্দময় হয়ে উঠছে আপনার সন্তানের মনোজগৎ। ছেলে-মেয়েকে ব্যস্ত রাখার জন্য মোবাইল তুলে না দিয়ে রঙিন গল্পের বই তুলে দিন। স্কুলের পাঠ্যবই রাত-দিন পড়িয়ে, কোচিং করিয়ে পরীক্ষায় হয়তো ভালো ফল করবে। কিন্তু ভালো মানুষ হবে- সেই নিশ্চয়তা কিন্তু নেই। শৈশবের এই স্মৃতিগুলো তাদের কষ্টের সময় সঙ্গ দিবে। একটু ভাবুন- আপনার শৈশব কত রঙিন ছিল। আর তাদের শৈশব কেন চার দেয়ালে আবদ্ধ হয়ে থাকবে।

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত নির্বাচনী উৎসবে মেতেছে। একইসাথে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনার সংবাদও প্রতিদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই অভিভাবকদের সন্তানদের বিষয়ে বাড়তি সতর্কও থাকতে হবে। যাতে তাদের আনন্দটা ফিকে হয়ে আজীবনের বোঝা না হয়।

রবীন্দ্রনাথের শৈশবের ছুটির আনন্দের কথা অনেকেরই কানে বাজে এখনো...

মেঘেরে কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি,

আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি।

কী করি আজ ভেবে না পাই পথ হারিয়ে কোন বনে যাই,

কোন মাঠে যে ছুটে বেড়াই সকল ছেলে জুটি,

আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি। ।

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence