১৮ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবি

১৮ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবি
১৮ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবি  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. মুহাম্মদ শামসুজ্জোহার স্মৃতি চিরস্বরণীয় করতে ১৮ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে। শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অবস্থিত শহীদ ড. শামসুজ্জোহার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এ দাবি জানান উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।

উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশর স্বাধীকার আন্দোলন ‘৫২ সাল থেকে ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত যে মহান মানুষেরা আত্মত্যাগ করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম এক আত্মত্যাগকারী হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব শহীদ ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা। তিনি দেশের স্বাধীকার আন্দোলনের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। তাঁর আত্মাহুতির মধ্য দিয়েই দেশে মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন আরো বেগবান হয়।

তিনি বলেন, মহান এই শিক্ষকের স্মৃতি চির স্মরণীয় করতে ১৮ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস করার দাবি দীর্ঘদিনের। এই দাবি এখন বিভিন্ন মহল থেকে উঠছে। মহান এই শিক্ষকের স্মৃতি চির অম্লান করতে সরকারের কাছে এ দিনকে জাতীয় শিক্ষক দিবস করার ঘোষণার জোর দাবি জানান উপাচার্য।

পুষ্পস্তবক অর্পণকালে সেখানে উপ-উপাচার্যদ্বয় অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া ও অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলামসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষ হলে শিক্ষক সমিতিসহ ক্যাম্পাসের ছাত্রসংগঠন, সংস্কৃতিক জোট ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

স্বাধীকার আন্দোলনে হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও তৎকালীন প্রক্টরের দায়িত্বে ছিলেন।

আরও পড়ুন: ড. শামসুজ্জোহা বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী

১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। সার্জেন্ট জহুরুল হকের মৃত্যুর খবর শুনে দেশব্যাপী গণ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার চেষ্টা করে। প্রক্টর শামসুজ্জোহা তখন বুঝতে পারেন আন্দোলনকারী ছাত্ররা মিছিল বের করলে অনেক ছাত্রের প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি নিজের জীবনবাজি রেখে ছাত্রদের মূল ফটক থেকে ফিরে যেতে বলেন। পাক সেনাসদস্যরা তখন মিছিলের সম্মুখভাবে অবস্থান করছিলেন। এই সঙ্কটাপন্ন মুহূর্তে ছাত্রদের প্রাণ বাঁচাতে শামসুজ্জোহা নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন সেনাসদস্যদের।

এই শিক্ষক বলেছিলেন, ‘দয়া করে গুলি ছুঁড়বেন না, আমার ছাত্ররা এখনই চলে যাবে এখান থেকে।’ কিন্তু সেনা সদস্যরা তাঁর সব কথা উপেক্ষা করে গুলি চালাতে গেলে ড. জোহা নিজে এগিয়ে যান। তখন তার ওপরই গুলি চালায় সেনারা। রাবির মূল ফটক থেকে বেরিয়ে একটু পূর্ব পাশে রাস্তার অপর ধারে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাঁকে পাকিস্তানি বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে।

এর আগের দিন ১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর আইয়ুব খান সরকার হামলা চালালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে সন্ধ্যায় সবার সামনে ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত নিজের শার্ট দেখিয়ে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালিন প্রক্টর শহীদ ড. শামসুজ্জোহা বলেছিলেন, 'আজ আমি ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত, এরপর কোনো গুলি হলে তা ছাত্রকে না লেগে যেন আমার গায়ে লাগে’।

মহান এই শিক্ষককে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে সমাহিত করা হয়। যা এখন জোহা চত্ত্বর নামে পরিচিত। এছাড়া শহীদ ড. জোহাকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি হলের নামকরন করা হয় শহীদ শামসুজ্জোহা হল।পবরর্তীতে হলের পশ্চিম পাশে নির্মাণ করা হয়েছে স্ফুলিঙ্গ ভাস্কর্য।

পাশাপাশি তাঁর মৃত্যুর ৩৯ বছর পর ২০০৮ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরষ্কারে ভূষিত করাসহ তাঁর নামে একটি স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করা হয়। শুরু থেকেই এই দিনকে চির স্মরণীয় করতে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে তাঁর আত্মত্যাগের অর্ধশতক পার হলেও, সে দাবি এখন পূরণ হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence