রাবিতে হেমন্তের সন্ধ্যা মানেই পশ্চিম পাড়ায় ‘পিঠা আড্ডা’

রাবিতে হেমন্তের সন্ধ্যা মানেই পশ্চিম পাড়ায় ‘পিঠা আড্ডা’
রাবিতে হেমন্তের সন্ধ্যা মানেই পশ্চিম পাড়ায় ‘পিঠা আড্ডা’  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হেমন্তের সন্ধ্যা মানেই এক অন্যরকম অনুভূতি। প্রখর তাপ দাহকে বিদায় জানিয়ে ক্যাম্পাসে বয়ে চলে হিমেল হাওয়া। সন্ধ্যার আকাশে জমা আলতো কুয়াশার ঘনঘটা সহসাই শীতের পরশকে আলিঙ্গন করে। আর শীত পরশকে উপভোগ করার জন্য মতিহারের সবুজ চত্বরে শুরু হয় নানা আয়োজন। যার অন্যতম আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাড়ার ‘পিঠা আড্ডা’। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যা হওয়া মানেই বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী ও প্রেমিকযুগলদের পশ্চিম পাড়ায় যাওয়ার হিড়িক।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া ও তাপসী রাবেয়া হলের মধ্যবর্তী ফাঁকা যায়গার বটতলার নিচে প্রতিদিন জমে উঠে এই আড্ডা। যেখানে গাছতলার নিচে বিছানো পাটির উপর গোল হয়ে বসে বন্ধু ও সহপাঠীরা মেতে উঠে হাসি-তামাশা, গল্পগুজব ও খুনসুটিতে। প্রেমিকযুগল তার প্রিয়জনের কাঁধে মাথা ও হাতে হাত রেখে মনের কথা আদান-প্রদানের পাশাপাশি উপভোগ করে রকমারি সব পিঠা। শুধু তাই নয়, এখানে পিঠা খেতে অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এসেও ভিড় জমায়।

দেখা যায়, উৎসবমুখর ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে জ্বলছে প্রায় ১৫টি চুলা। যেখানে প্রতিদিন প্রায় ১০ জনকর্মী চালের আটা দিয়ে তৈরি করে মুখরোচক এসব চিতই, ভাপা, পাটিসাপটা ও তেল পিঠা।

সেখানে কথা হয় পিঠা বিক্রেতা মোকশেদ আলীর সাথে, যিনি টাকা গ্রহণের পাশাপাশি পরিবেশন করছেন বিভিন্ন প্রকারের ভর্তা। তিনি জানান, পিঠার স্বাদ বাড়ানোর জন্য আমরা এখানে বিভিন্ন ধরনের ভর্তাও সরবরাহ করে থাকি। যার মধ্যে রয়েছে শুঁটকি, ধনে পাতা, কাচা মরিচ, সরিষা, কালিজিরা ও বেগম ভর্তা।

বিভিন্ন পিঠার দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে এ বিক্রেতা জানান, আমরা চার ধরনের পিঠা বিক্রি করি। যেখানে প্রতিটি তেল পিঠা ১৫ টাকা, পাটিসাপটা ১৫ টাকা, ভাপা ১০ টাকা, চিতই ৫ টাকা এবং সবরকমের ভর্তার একটি বাটি ১০ টাকা। এছাড়া সব মিলে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হয় বলেও জানান তিনি।

পিঠা প্রস্তুতকারী একজন সদস্য আসমা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমারা প্রতিদিন বিকেল ৪ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এসব পিঠা তৈরী করি। এই ছেলে-মেয়েরা একসাথে আসে পিঠা খায়। আবার চলে যায়। এখানে এসে এসব পিঠা বানিয়ে তাদের খাওয়াতে পেরে ভালোই লাগে। আমাদের ভালো আয়ও হচ্ছে।

কথা হয় পিঠা খেতে আসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নবনীতা রায়ের সাথে। তিনি জানান, এখানে পিঠা খেতে এসে ভালোই লাগে। কেননা এ সমস্ত পিঠা আমরা সচরাচর বাড়িতে থাকা অবস্থায় খাই। কিন্তু পড়াশোনার জন্য বাইরে থেকে অনেক সময় তা পাওয়া যায় না।

এদিকে পিঠার দাম কমানোর কথা জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহাগ আলী জানান, তেল বা পাটিসাপটার মতো একটা পিঠার দাম ১৫ টাকা রাখা হয়েছে। যা পিঠার গুণগত মানের তুলনায় দামটা একটু বেশি। তাই সব পিঠা ৭-১০ টাকার মধ্যে রাখলে সবার জন্য সুবিধা হবে।

এ বিষয়ে প্রস্তুতকারী দ্রব্য ও মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এই মূল্য নির্ধারণের কথা জানান দোকানদার পক্ষ। তবে পিঠার দাম ও দোকানদারদের মজুরির বিষয়টি মাথায় রেখে পিঠার একটি সহনশীল দাম নির্ধারণের কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক লিয়াকত আলী।


সর্বশেষ সংবাদ