করোনার অজুহাতে এখনো গৃহবন্দী জাবি উপাচার্য, ৬০৬ দিন দপ্তরে অনুপস্থিত

উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম
উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম   © ফাইল ছবি

দাপ্তরিক কাজে সশরীরে উপস্থিত না থাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে। সিনিয়র শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, তিনি বাসায় বসেই সব ধরনের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। হিসাবে দেখা গেছে, তিনি ৬০৬ দিন দপ্তরে অনুপস্থিত রয়েছেন।

আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ সভা অনলাইনে করে থাকেন। যেগুলোতে তার ছেলে কারিগরি সহায়তা দেয়ায় ওইসব সভার গোপনীয়তা ভঙ্গ হয় বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।    

এদিকে চলতি মাসের ৯ তারিখ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সশরীরে উপস্থিত থেকে ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলেও দীর্ঘ ৯ দিনের ভর্তি পরীক্ষার একদিনও তিনি পরিদর্শনে যাননি।

কেন্দ্র পরিদর্শনে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘শারীরিক অসুবিধা থাকায় এবার কেন্দ্র পরিদর্শনে যেতে পারিনি। আমার প্রতিনিধিরা সবাই যাচ্ছেন, আমি দূরে থেকে কাজ করছি। অনেক ক্ষেত্রে আমিও তাদের সমান কাজ করছি, আবার বেশিও করা লাগছে। তবে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রে যেতে পারলে ভালো লাগতো।’

জানা গেছে, উপাচার্যের অনুপস্থিতির ফলে তার নিজ বাসায় ফাইল চালা-চালিতে প্রশাসনিক কাজে নেমে এসেছে মন্থর গতি। উপাচার্যের অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, একটি ফাইল অফিসে জমা হলে সেটি প্রথমে উপাচার্যের বাড়ির গেটে যায়। করোনা সংক্রামণের আশঙ্কার কারণে এক-দুইদিন ফাইলটি সেখানে পড়ে থাকে। এরপর ইস্ত্রি করে ফাইলটি উপাচার্যের কাছে পৌঁছানো হয়। উপাচার্যের স্বাক্ষর শেষে পুনরায় ফাইলটি গেটে ফিরে আসে। সেখান থেকে কর্মকর্তারা ফাইলটি প্রশাসনিক ভবনে নিয়ে আসেন। এতে করে কখনো কখনো অতি গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে স্বাক্ষর হতে সময় লাগে তিন থেকে চার কার্য দিবস। এমনকি ফাইল যাতায়াতের এই চক্রে পড়ে অনেক ফাইল আবার হারিয়েও যায়।

আবার বাড়িতে দপ্তর বসানোয় তার পরিবারের সদস্যরা এসব কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া কারিগরি সহায়তা করায় তার ছেলে গুরুত্বপূর্ণ সভায় অনলাইনে উপস্থিত থাকেন। এতে সভার গোপনীয়তা নষ্ট হয় বলেও অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে উপাচার্য বর্তমানে বাসার বাইরে বের হন না।

পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, ‘উপাচার্য করোনা শুরুর প্রথম থেকেই বাইরে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কাজেই বের হননি। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই অফিস করছেন, সেখানে একজন উপাচার্যের ঘরে বসে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করা উচিত নয়।’

তবে এ বিষয়ে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ