ঢাবির ‘মল চত্বর’ যেন প্রকৃতির চাদরে ঢাকা পড়ছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মল চত্বর। কলাভবন আর রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত এই চত্বর যেন সবারই চেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল যে কি-না মল চত্বর একেবারেই চেনেন না। 

ক্যাম্পাসের ভিসি চত্বর, হাকিম চত্বর, দোয়েল চত্বর, মিলন চত্বর ও সমাজবিজ্ঞান চত্বর— এরকম বহু চত্বরের মধ্যকার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ চত্বর হল মল চত্বর। প্রতিবছরই এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বের হয়ে যায় অসংখ্য শিক্ষার্থী। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের যে স্মৃতিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় বারবার টেনে আনে তার মধ্যে মল চত্বরে গান, আড্ডা, খেলাধুলা আর নানা উন্মাদনার মাতানো সময়গুলো উল্লেখযোগ্য। 

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সাবেক ফরাসী সংস্কৃতি মন্ত্রী আন্দ্রে মারলোর সম্মানার্থে ক্যম্পাসের একটি চত্বরের নামকরণ করা হয়। তখন সেটির নাম ছিল মারলো চত্বর। কালক্রমে এটিই বিকৃত হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘মল’ নামে। হয়তো শিক্ষার্থীদের অনেকে জানেও না- আদৌতে না একজন সম্মানিত ব্যক্তির নাম ছিল। মহান ব্যক্তির স্মরণে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ চত্বরে মালরো বাগান নামে একটি বাগানের নামকরণ করা হয়েছে।

এক সময় এই মল চত্বরে নানান রকমের প্রাচীন গাছের সমারোহ থাকলেও, মাটিতে ছিলনা একটু বসার মত পরিবেশ। অল্প বৃষ্টিতেই বর্ষাকালে পানি জমে থাকতো এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ থাকতো বেশিরভাগ সময়। দিনের বেলায় ক্রিকেট খেলা আর রাতের বেলা চাঁদ ও বৈদ্যুতিক আলোর নিচে জমতো ফুটবল খেলার আসর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহনকারী বাসের চলাচলে এর রাস্তাগুলো সর্বদা থাকেই ব্যস্ত— এরকম বেশকিছু কারণেই মল চত্বরে ছিল সবুজ প্রকৃতির ঘাটতি।

কিন্তু এখানে আর সেই পরিবেশ নেই। বর্তমানে মল চত্বরের চারপাশে সবুজের সমারোহ বিরাজ করছে। সবুজের সমারোহে ভরে উঠেছে পুরো মল চত্বর। চত্বরের ভিতরে সবুজ ঘাস আর চতুর্দিকে বাহারী ফুলের সমাহার প্রকৃতিপ্রেমীসহ সকলেরই ভালো লাগায় পরিণত হয়েছে। নীল আকাশের নিচে এ যেন সবুজ গালিচা পেতে আছে সজীব প্রকৃতি। মলচত্বরের এই সবুজায়নে প্রকৃতিপ্রেমীরাসহ সবাই খুশি। 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গত দেড় বছর ক্যাম্পাস বন্ধ থাকাকালীন সময়ে গোটা মল চত্বর সেজেছে ভিন্নরূপে। পুরো মল চত্বর যেন সবুজ গালিচায় পরিণত হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই সবুজ আর সবুজ। এ সবুজের মধ্যে রয়েছে নতুনত্বের ছোঁয়া। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন সবুজায়ন সত্যি প্রশংসনীয়। ইট-পাথরের এই শহরে এ যেন এক টুকরো নিরবতা ও দীর্ঘশ্বাস ফেলার জায়গায় পরিণত হয়েছে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মীর লোকমান বলেন, পৃথিবীর সুন্দর ও নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভেতর দিয়ে হেঁটে গেলে মন ভাল হতে বাধ্য যে কারও। সবুজ ঘাসসমৃদ্ধ মাঠ, গাছপালা আর ফুলের বাগানে সজ্জিত সুন্দর রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মন পুলকিত হয়। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর এবার সেই সৌরভটুকু পুরোপুরি ছড়াচ্ছে, বিশেষ করে কোভিডকালীন সময়ে তা প্রস্তুত হয়েছে। সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে অবশ্যই ঘুরে আসবো প্রিয় মল চত্বর, আনন্দ নিয়ে বসবো পকেট ভরে।

জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাহজাহান হোসেন বলেন, মল চত্বরে পুরোনো অবস্থায় যে ধূলাবালি ছিলো সেখানে এমন সবুজায়ন সত্যি প্রশংসনীয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই এই সংস্কার সাধনের জন্য। আশা করছি তারা আরও এমন উদ্যোগ হাতে নেবে এবং ক্যাম্পাসকে আরও সৌন্দর্যমন্ডিত করে একটি সবুজ, পরিষ্কার ও পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদেরকে উপহার দেবে।

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর যেন সবুজের সমারোহে ভরপুর। সবুজ বর্ণের ছায়াছবিতে যেন সেজেছে আমাদের প্রিয় মল চত্বর। আরও প্রস্ফুটিত হোক আমাদের সবুজ ও নির্মল এ প্রাণের ক্যাম্পাস।

মল চত্বরের সবুজায়ন নিয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মানেই সর্বপ্রথম যে কথাটা সামনে আসে সেটি হল সবুজ ছায়া ঘেরা একটা সুন্দর জায়গা। বৃক্ষহীন এ শহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এ কথাটা যেন আরও সত্য। বর্তমানে মল চত্বরে যে সবুজায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি এতে মনে হচ্ছে যে, এই ইট-পাথরের শহরে এটি যেন এক টুকরো নিরবতা ও দীর্ঘশ্বাস ফেলার জায়গায় পরিণত হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে ভালো দিক। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদেরকে ধন্যবাদ জানাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের পরিচালক সরদার ইলিয়াস হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সবুজায়ন ছাড়াও মল চত্বর কেন্দ্রিক আমাদের আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। যেমন- অত্যাধুনিক লাইটিং, হাটার জন্য লেন করা, আরও ফুলগাছ লাগানো, স্মৃতিস্তম্ভ ও ফোয়ারা স্থাপন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অচিরেই আমরা এগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence