রাবি অধ্যাপক আব্দুল হামিদের মৃত্যুতে দর্শন এসোসিয়েশনের স্বরণ সভা
- রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২১, ১১:৩১ AM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আব্দুল হামিদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে স্বরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৭ অগাস্ট) রাত ৮টায় দর্শন এসোসিয়েশনের উদ্যোগে অনলাইনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সভায় মরহুমের স্মৃতি শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করে বক্তৃতা দেন দেশ-বিদেশের বরেণ্য অধ্যাপক, গবেষক ও চিন্তাবিদগণ।
সভায় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক খানম মমতাজ আহমেদ বলেন, দর্শন পড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে তৈরী করা। মরহুম অধ্যাপক ড. হামিদ নীতিসাস্ত্র পড়াতেন। তিনি নীতি নৈতিকতায় যেমন ছিলেন অতুলনীয়, তেমনি নৈতিকতার সাথে শিক্ষার্থীদের তৈরী করতে কাজ করে গেছেন। একজন আদর্শবাদ মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাত দান করেন বলে দোয়া প্রার্থনা করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, মরহুম অধ্যাপক আব্দুল হামিদ ছিলেন আমার খুবই ঘনিষ্ঠ। মানুষ হিসেবে তার মতো এতো উদার মনের মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যিই মুশকিল। দর্শন চর্চার পাশাপাশি নৈতিকতা এক দৃষ্টান্ত স্থাপনে কাজ করে গেছেন তিনি। দর্শন পরিবারে তার রেখে যাওয়া সকল দৃষ্টান্ত পাথেয় হয়ে থাকবে বলে জানান এই অধ্যাপক।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম মরহুমের স্মৃতি প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, অধ্যাপক আব্দুল হামিদ ছিলেন দেশের বিশিষ্ট একজন দার্শনিক। জীবনে বহুবার তাঁর সঙ্গ পেয়েছি। তাঁর মতো এমন কোমল এবং বন্ধু সুলভ মানুষ কমই দেখেছি। তাছাড়া যতবার বিশিষ্ট এই স্কলারের সঙ্গ পেয়েছি, তাঁর উদার মানসিকতায় মুগ্ধ হয়েছি। তাছাড়া নীতি দর্শনে অবদান এবং নৈতিক শিক্ষাই মরহুমের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এই অধ্যাপক।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও দর্শন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এএইচএম জিহাদুল করিম মরহুমের অধ্যাপনাকালের বিভিন্ন দিক স্বরণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে তাঁর অাতিথিয়তার কথা শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করে বিদেহী আত্মা মাগফিরাত কামনা করেন সাবেক এই উপাচার্য।
মরহুমের স্মৃতিকে শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, অধ্যাপক আব্দুল হামিদ ছিলেন অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের মানুষ।আচার-আচরণ, ব্যবহার, কথাবার্তা তাঁর কোন তুলনা হয় না। আমার বড় ভাই একই বিভাগের অধ্যাপক হওয়ায় শিক্ষার্থী বান্ধব ও মিষ্টভাষী এই অধ্যাপকের সাথে আমার পরিচয়। ক্যাম্পাসে দেখা হলেই কাছে ডেকে স্নেহভরে তিনি খোঁজ খবর নিতেন বলে জানান তিনি।
নীতিদর্শনের উপর তার অগাধ ভালবাসা ও গবেষনার কথা স্বরণ করে উপাচার্য বলেন, বিশিষ্ট এই দার্শনিক নীতিদর্শনের একজন অধ্যাপক ছিলেন। তাছাড়া বাংলাদেশে নীতিদর্শন প্রতিষ্ঠার প্রতিকৃতিও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট্য এই চিন্তাবিদ। তাছাড়া নীতিদর্শনের উপর রচিত তার ৬টি গ্রন্থ নীতি-নৈতিকতার এক পাথেয় হয়ে থাকবে বলে জানান উপাচার্য।
এছাড়াও দর্শন বিষয়ে মরহুম অধ্যাপক আব্দুল হামিদের গবেষণা, পাণ্ডিত্য ও অধ্যাপনার বিভিন্ন দিক শ্রদ্ধার সাথে তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হারুনর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক কাজী নুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, রাজশহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, দর্শক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মহেন্দ্রনাথ অধিকারী, রাবি দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক জিতেন্দ্রনাথ সরকার, দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আব্দুল হাই তালুকদার, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শফিকুল আলম, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান, রাবি দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এস এম আবু বকর, অধ্যাপক আসাদুজ্জামান ও অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম প্রমূখ।
এসময় সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক, বর্তমান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ মরহুমের নিকট আত্মীয়গণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, গত ১ জুলাই ভোর ৪টায় রাজশাহী নগরীর বিনোদপুর এলাকায় নিজ বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন দেশ বরেণ্য বিশিষ্ট এই দার্শনিক।