রাবিতে দুর্নীতি: সাবেক উপাচার্যসহ পাঁচজনের ব্যাংক হিসাব তলব 

রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান
রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান  © সংগৃহীত

নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম-দুর্নীতিতে বহুল আলোচিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানসহ তাঁর পরিবারের পাঁচজন সদস্যের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে করা তার বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় শিক্ষামন্ত্রনালয় কর্তৃক তদন্তের পর দেশের সবকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে চিঠি দিয়ে এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে।

চিঠিতে আব্দুস সোবহানের পাশাপাশি তার স্ত্রী মনোয়ারা সোবহান, ছেলে মুশফিক সোবহান, মেয়ে সানজানা সোবহান ও জামাতা এটিএম শাহেদ পারভেজের ব্যাংক হিসাব তলবের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও দেখুন: দুর্নীতির তদন্ত স্থগিত চেয়ে বেরোবি ভিসির রিট

আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১১৩ (এ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ তথ্য চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে রাবির সাবেক ভিসিসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের একক বা যৌথ নামে কিংবা তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক আমানতের পাশাপাশি যে কোন স্থায়ী, চলতি ও ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, সঞ্চয়পত্র বা অন্য যেকোনো ধরনের সঞ্চয় থাকলে তা আগামী ১ জুনের মধ্যে বোর্ডে পাঠাতে বলা হয়েছে। 

এরআগে, গতবছরের শেষে আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগদানে স্থগিতাদেশ দিয়ে প্রায় ডজনখানেক চিঠি দেয় শিক্ষামন্ত্রনালয়। তবে সেই স্থগিতাদেশ অমান্য করে গত ৬ মে মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে প্রায় ১৪০ জনকে নিয়োগ দেন তিনি।  

বিদায়কালে উপাচার্যের এমন কর্মকাণ্ডের জের ধরে ক্যাম্পাসে জুড়ে শুরু হয় লঙ্কাকাণ্ড। দফায়-দফায় সংঘর্ষে সেদিন ক্যাম্পাসে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। ফলে ঐদিনই সকল নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অনভিপ্রেত উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষামন্ত্রনালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি সরেজমিনে সকল ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে মন্ত্রনালয়ে সুপারিশমূলক একটি প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদনে নিয়োগের ঘটনায় প্রধান দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ড. এম আব্দুস সোবহান এবং প্রধান সহযোগী হিসেবে তার জামাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রভাষক এটিএম শাহেদ পারভেজকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী, রেজিস্ট্রার শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল আলম এবং পরিষদ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন অর রশীদকে সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটি এম আব্দুস সোবহানের শেষ কর্মদিবসে বিতর্কিতভাবে দেয়া ১৪০ জনের নিয়োগ বাতিলের পাশাপাশি তার মেয়ে ও জামাতাসহ এর আগে অনিয়ম করে নিয়োগ পাওয়া আরো ৩৪ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের সুপারিশও করেছে। এছাড়া অন্যদেশের নাগরিকত্ব থাকায় প্রতিবেদনে এম সোবহানের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে।

 


সর্বশেষ সংবাদ