শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা রাবিতে সর্বনিম্ন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান ও তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের বিরুদ্বে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি। কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে অনিয়মের আশ্রয় নিতেই বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় ইচ্ছাকৃত পরিবর্তন এনেছেন তিনি। ২০১৭ সালের দিকে নীতিমালায় এই পরিবর্তন আনেন উপাচার্য।

নিজের মেয়ে এবং জামাতাসহ কাছের লোকদের নিয়োগ দিতে শর্ত শিথিল করেছেন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে। এর ফলে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন উপাচার্য।

রাবি উপাচার্যসহ তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রতিবেদন দিয়েছে ইউজিসি।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, উপাচার্য আবদুস সোবহান ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করে যোগ্যতা কমান। আগের নীতিমালায় আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল সনাতন পদ্ধতিতে এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত চারটি স্তরেই প্রথম শ্রেণি বা গ্রেড পদ্ধতিতে এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ-৪.৫০, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরে ন্যূনতম সিজিপিএ-৩.৫০। এ ছাড়া স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মেধাক্রম প্রথম থেকে সপ্তমের মধ্যে থাকতে হবে। পরিবর্তিত নীতিমালায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ মোটাদাগে ৩.২৫-এ নামিয়ে আনা হয় এবং মেধাক্রমে থাকার শর্তও তুলে দেওয়া হয়।

তদন্ত কমিটি বলেছে, নীতিমালা পরিবর্তনের মাধ্যমে ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশে চলা চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা এখন সর্বনিম্ন।

শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় যোগ্যতা কমিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের করা ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন উপাচার্য।

তদন্ত কমিটি বলেছে, যোগ্যতা কমানোর একটাই উদ্দেশ্য, ২০১৭ সালের আগে যাঁদের আবেদন করার যোগ্যতা ছিল না, তাঁদের নিয়োগের পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে।

এই সুযোগেই মার্কেটিং বিভাগ থেকে পাস করা উপাচার্যের কন্যা সানজানা সোবহান নিয়োগ পান টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে এবং জামাতা এ টি এম শাহেদ পারভেজ নিয়োগ পান ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)।

আগের নীতিমালা অনুযায়ী তাঁদের আবেদন করারই যোগ্যতা ছিল না। কারণ বিভাগে উপাচার্যকন্যার মেধাক্রম ছিল ২১ তম, আর জামাতার এমবিএ পরীক্ষায় মেধাক্রম ছিল ৬৭ তম এবং তাঁর ফল ছিল সিজিপিএ-৩.৪৭। অথচ অন্য আবেদনকারীদের অধিকাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি ছিল।

এছাড়া নতুন প্রতিষ্ঠিত টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে সাধারণত প্রথমে টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয় থেকে পাস করা প্রার্থী নেওয়ার কথা। কিন্তু সেটি না করে মার্কেটিং ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে উপাচার্য কন্যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

উপাচার্য তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, নিয়োগ বোর্ড এই নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু তদন্ত কমিটি দেখেছে, বোর্ডে পাঠদানের দক্ষতা যাচাই হয়েছে— এমন কোনো দালিলিক প্রমাণও নেই। এমন নিয়োগে বোর্ডেরও দোষ দেখেছে কমিটি।

আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগেও নিয়মের ব্যত্যয় দেখেছে তদন্ত কমিটি। অনুষদে প্রথম হওয়া, প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পাওয়া, এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত প্রথম বিভাগ বা শ্রেণি থাকা আবেদনকারীকে বাদ দিয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে একজন পরে সহ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার মেয়েকে বিয়ে করেন। তদন্ত কমিটির মূল্যায়ন ‘লক্ষ্য করেই’ এটি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশিন। প্রতিবেদনটি এখনো আমাদের হাতে আসেনি। হাতে পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence