রাবি ভিসি-প্রোভিসির অনিয়ম নিয়ে শুনানি করবে ইউজিসি

  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক  ড. চৌধুরী মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম আমলে নিয়ে উন্মুক্ত শুনানির আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ইউজিসি কার্যালয়ে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

গত বছরের শেষ দিকে রাবির উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫৮ জন শিক্ষকের দেয়া নানা অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে এ শুনানির আয়োজন করছে ইউজিসি। অভিযোগকারী শিক্ষকের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন ওই শুনানিতে উপস্থিত থাকবেন।

জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগমকে আহবায়ক করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, এসব তদন্ত কাজ প্রায় শেষের দিকে। তাছাড়া, আগামী মাসের ১৭ সেপ্টেম্বর এসব অনিয়ম নিয়ে শুনানি করা হবে। শুনানির পর তদন্ত কমিটির সুপারিশ ইউজিসি থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

গত বছরের শেষের দিকে রাবি প্রশাসনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ গুরুতর ১৭ অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ইউজিসিতে জমা দেন সরকার সমর্থক প্রগতিশীল শিক্ষকদের মোট ৫৮ জন শিক্ষক। অভিযোগগুলোর অধিকাংশই আনা হয়েছে রাবি উপাচার্যের স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অযোগ্যদের গণহারে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো ও নিয়োগ করা এবং নিজে প্রতারণামূলকভাবে অবসর গ্রহণের পর অবসরের সব সুবিধাদি তুলে আবার উপাচার্যের পদে আসীন হওয়া বিষয়ে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ইউজিসির সার্বজনীন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার আলোকে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পাদন করা বাধ্যতামূলক। তবে উপাচার্য তার মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ দিতে রাবির ৪৭৫তম সিন্ডিকেটে বিদ্যমান নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন করেন। এতে শিক্ষক নিয়োগে আগের যোগ্যতা শিথিল করা হয়। এরপর উপাচার্যে নিজের মেয়ে সানজানা সোবহানকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগে এবং জামাতা শাহেদ পারভেজকে ব্যবসা প্রশাসন ইন্সটিটিউটে নিয়োগ দেন। একইসঙ্গে উপ-উপাচার্যের জামাতা সালাহউদ্দিন সাইমুমকে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতায় আইন বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়। এ বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত প্রার্থীকে বাদ দেয়া হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালের ২১ জুন দিনের প্রথমভাগে অধ্যাপক ড. আব্দুস সোবহান দ্বিতীয়বার উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। এইদিনই তার চাকরির বয়সসীমা শেষ হয়। ফলে তিনি এদিন সকালে উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন এবং বিকালে নিজ বিভাগ ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকতার পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। এদিনই তিনি রাষ্ট্রপতির দফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর আখতার ফারুককে রাবি উপাচার্যের দায়িত্বভার অর্পণ করেন। এরপর তিনি একজন শিক্ষকের অবসরকালীন সব সুবিধাসহ মোট ৮০ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে নেন। এরপর তিনি আবার নিজেই উপাচার্য হিসেবে প্রফেসর আখতার ফারুকের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিভাগের শিক্ষকের পদ থেকে অবসর গ্রহণ, পেনশনের টাকা তোলা, আরেকজনকে উপাচার্যের দায়িত্বভার দেয়া এবং পুনরায় উপাচার্য পদে আসীন হওয়ার বিষয়গুলো তিনি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতির দফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে না জানিয়েই সম্পাদন করেন। শিক্ষকরা অভিযোগে বলছেন, উপাচার্য সোবহান এসব আজগুবি কর্মকাণ্ড শুধু আইনবিরোধী নয়, প্রতারণামূলকও।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউজিসি থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। এ কমিটির কার্যক্রম এখনও চলমান। এদিকে, গত সোমবার ইউজিসি থেকে এক চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য এবং উপাচার্য কর্তৃক মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ধোঁকা দেওয়া ও শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করে উপাচার্যের মেয়ে ও জামাতাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান, অ্যাডহক ও মাস্টার রোলে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য, উপাচার্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে দুর্নীতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩ লংঘন করে বিভিন্ন বিভাগের সভাপতি নিয়োগ ইত্যাদি অভিযোগসমূহ তদন্ত করার নিমিত্তে কমিশন কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আপনাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য তদন্ত কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ইউজিসি অডিটরিয়ামে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে চিঠিতে বলা হয়। 

তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট, রাবি উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য ছাড়াও ওই চিঠিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপককে পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে এক অধ্যাপক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গত বছরের শেষের দিকে ৫৮ জন শিক্ষক ইউজিসিতে অভিযোগ জমা দিয়েছিল। এরপরও বেশ কয়েকজন শিক্ষকও আলাদাভাবে অভিযোগ দিয়েছিল। এসবের প্রেক্ষিতে আমাদের তিনজনকে শুনানিতে ডাকা হয়েছে। ৫৮ জনের পক্ষে আমরা তিনজনই ওই শুনানিতে উপস্থিত থাকব। 

শুনানির বিষয়টি নিশ্চিত করে তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম  দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইউজিসি কর্তৃপক্ষ চেয়েছে এই শুনানি করতে, তাই এটি করা হবে। শুনানিতে দুই পক্ষকে ডাকা হয়েছে। তারা তাদের অভিযোগগুলো সেখানে তুলে ধরবেন।

রাবি উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অনিয়মের তদন্ত কমিটির ব্যাপারে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্তের আলোকে কমিটি একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।


সর্বশেষ সংবাদ