বুয়েটের বিশেষজ্ঞ সদস্যের সমন্বয়ে ঢাবির মুহসীন ও কুয়েত মৈত্রী হল পরিদর্শন

পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত

বুয়েটের বিশেষজ্ঞ সদস্যের সমন্বয়ে ঢাবির মুহসীন ও কুয়েত মৈত্রী হল পরিদর্শন
বুয়েটের বিশেষজ্ঞ সদস্যের সমন্বয়ে ঢাবির মুহসীন ও কুয়েত মৈত্রী হল পরিদর্শন  © ঢাবি জনসংযোগ

ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি নিরীক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য বুয়েটের একজন বিশেষজ্ঞ সদস্যের সমন্বয়ে প্রকৌশল দলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলসহ বিভিন্ন হলের পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে প্রকৌশল দল আজ রবিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল এবং দুপুরে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল পরিদর্শন করে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য হলও পরিদর্শন করা হবে। এছাড়া, সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল এবং মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে।

পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষ, আবাসিক শিক্ষক, ডাকসু ও হল সংসদের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। হল পরিদর্শনের কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করার পর তা সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। কারিগরি মূল্যায়নে ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত হলে শিক্ষার্থীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভূমিকম্পের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল শনিবার (২২ নভেম্বর) উপাচার্য কার্যালয় সংলগ্ন সভাকক্ষে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান সভায় সভাপতিত্ব করেন। এই সভায় হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলসহ বিভিন্ন হলের পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় হল নির্মাণের কাজ আগামী মার্চ মাসে শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

জানা গেছে, গতকালের সভায় বুয়েটের Bureau of Research, Testing and Consultation (BRTC) প্রণীত ২০০৮ ও ২০১৫ সালের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের অবকাঠামোগত ‘প্রকৌশল কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদন’ পর্যালোচনা করা হয়। এসব প্রতিবেদনে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলকে বসবাসের উপযোগী বলে নিশ্চিত করা হয়েছিল। বুয়েট বিশেষজ্ঞের পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে হলটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণার যে খবর ছড়ানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব বলে সভায় অভিমত প্রকাশ করা হয়।  

সভায় জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের সদস্যগণ ভূমিকম্পের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে যান এবং আহতদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করেন। এছাড়া তাঁরা বিভিন্ন হল পরিদর্শন করেন এবং হলের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।

সভায় আরও জানানো হয় ১৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন সমূহের মেরামত ও সংস্কার প্রকল্পের কাজ আগামী ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হবে। এরসঙ্গে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে চলমান ১৭৫টি রুমের সংস্কার কাজও অব্যাহত থাকবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হবে।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। ২ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় সম্বলিত এই প্রকল্প বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। ৫ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের প্রথম অর্থ বছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (ADP) ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়া গেছে। প্রথম ধাপে ছাত্রী ও ছাত্রদের হল নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ৩১টি ভবনের স্থাপত্য (Architectural) ও কাঠামোগত (Structural) ডিজাইনের পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে ই-জিপি (e-GP) পোর্টাল এবং জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে।

গত ১২ অক্টোবর প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা  (Annual Procurement Plan - APP) ইতোমধ্যেই ই-জিপি (e-GP) পোর্টালে প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট (PMU) সরকারি ক্রয় আইন (PPR), আর্থিক বিধিমালা এবং পরিকল্পনা নির্দেশিকা অনুসরণ করে প্রকল্পের কাজ দ্রুত দৃশ্যমান করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পের কাজ ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হবে। এই প্রকল্পের অধীনে ৬টি একাডেমিক ভবন নির্মাণ, ২৬০০ জন ছাত্রীর জন্য ৪টি আবাসিক হল নির্মাণ, ৫১০০ জন ছাত্রের জন্য ৫টি আবাসিক হল নির্মাণ, ৫টি ছাত্র হলের জন্য এবং ৪টি ছাত্রী হলের জন্য হাউজ টিউটর আবাসন সুবিধা তৈরি, শিক্ষক ও অফিসারদের জন্য ২টি আবাসিক ভবন নির্মাণ, ৫টি অন্যান্য ভবন (প্রশাসনিক ভবনসহ) নির্মাণ, ৪টি জলাধার সংস্কার এবং সৌন্দর্যবর্ধন, বিদ্যমান সার্ভিস লাইন মেরামত/সংস্কার, ১টি খেলার মাঠ উন্নয়ন, ২টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ এবং ড্রেনেজ সিস্টেম ও ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ