ফ্যাসিবাদী আমলের গুম, খুন ও লুটপাট নিয়ে টিএসসিতে প্রামাণ্যচিত্র
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:০১ AM , আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:০২ AM
ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুন ও লুটপাটের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বুধবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শিল্পকলা অ্যাকাডেমির ব্যবস্থাপনায় রাজধানীর ১০টি স্থানে এ আয়োজন হয়। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে দর্শনার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
টিএসসিতে প্রদর্শিত প্রামাণ্যচিত্রগুলোর মাধ্যমে দেশে সংঘটিত গুম, খুন, দমন–পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। প্রদর্শনী চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি আবু সাদিক কায়েম বক্তব্য রাখেন।
সাদিক কায়েম বলেন, ‘বাংলাদেশে খুনি হাসিনা এবং তার দোসররা গত ১৬ বছরে খুন, আয়নাঘর, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন এবং সর্বশেষ জুলাই বিপ্লবে গণহত্যা ও শিশুহত্যা করার মাধ্যমে এই বাংলাদেশে অবৈধভাবে টিকেছিল। সর্বশেষ জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার শাহাদাতের মাধ্যমে আজকে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসিনা যেভাবে লাশতন্ত্র কায়েম করার মাধ্যমে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে, সেটাই বাংলাদেশের সকল মানুষের জানা থাকা দরকার। আপনারা জানেন, ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর হাসিনা এবং তার দোসররা লগি-বৈঠা নিয়ে দিনে-দুপুরে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করে নৃত্য করেছিল। এরপর থেকে অসংখ্য গণহত্যা ও শিশুহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এই সকল ঘটনা এই খুনের ঘটনা, এই আইনাঘরের ঘটনা, গুম-খুনের ঘটনাগুলো বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।’
ডাকসু ভিপি বলেন, ‘আজকে খুবই খারাপ লাগে, আজকে যখন আমরা গণহত্যা, গুম, খুন, আইনাঘরের ছবিগুলো, প্রদর্শনীগুলো যখন দেখাই, এরপরও সমাজের কিছু বিকৃত মানুষ এবং খুনি হাসিনা ও তার দোসররা এই গুম, খুন, আইনাঘর, গণহত্যাকে নাটক বলে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই বাংলাদেশে খুনি হাসিনা এবং তার দোসরদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নাই। তাদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানে তাদেরকে নির্মূল করতে হবে। জার্মানিতে যেভাবে নাৎসিদেরকে নির্মূল করা হয়েছে, ইতালিতে যেভাবে মুসোলিনির বাহিনীদেরকে নির্মূল করা হয়েছে, এভাবে বাংলাদেশের খুনি হাসিনা, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং মুজিববাদকে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানে তাদেরকে দমন করতে হবে, তাদেরকে নির্মূল করতে হবে, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে হাসিনা এবং তার সকল দোসরদের বিচার হবে। খুনি হাসিনার ফাঁসি হবে এবং সকল দোসরদের যারা গুম, খুন, আইনাঘর করেছে, যারা আমাদের ২০০০ ভাই-বোনকে শহীদ করেছে, ৪০০ ভাই-বোনকে গুম করেছে, খুন করেছে তাদের সবার এই স্বাধীন বাংলাদেশে বিচার হবেই। জুলাই মাসে যেভাবে আমরা একসাথে রাস্তায় নেমেছিলাম, এই ফ্যাসিবাদীদের বিচারের প্রশ্নে, খুনি হাসিনার বিচারের প্রশ্নে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিচারের প্রশ্নে, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে এবং তাদের বিচার নিশ্চিত করে আমাদের এই স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশকে সবার জন্য নিরাপদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর এই যাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ আপনাদের সাথে আছে, দেশের আপামর মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার সাথে আছে।’
টিএসসি ছাড়াও যাত্রাবাড়ী পার্ক, রবীন্দ্রসরোবর, ধানমন্ডি, খিলগাঁও শান্তি পার্ক, মিরপুর পল্লবী (হাফিজ মোড় মাঠ), উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টর মুক্তমঞ্চ, উত্তরার জমজম টাওয়ার, মোহাম্মদপুর (টাউন হল প্রাঙ্গণ), বনানী এলিফ্যান্ট রোড এবং হাতিরঝিল (রামপুরা প্রান্ত) এলাকায় একইভাবে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।