রাকসু নির্বাচনে লড়বেন রেকর্ড ৩৪ নারী প্রার্থী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ  © টিডিসি সম্পাদিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন পদে রেকর্ড ৩৪ নারী শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়াও রয়েছেন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থী। রাকসুর দীর্ঘ ইতিহাসে নারী অংশগ্রহণের এই প্রবণতা রাজনীতিতে তাদের নেতৃত্ব ও সক্রিয় ভূমিকা আরও সুদৃঢ় হওয়ার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

ভিপি ও জিএস পদে নারী প্রার্থী
ভিপি পদে একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী ও ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের  তাসিন খান। পাশাপাশি সিনেট সদস্য পদেও লড়ছেন তিনি। জিএস পদে রয়েছেন চারুকলা বিভাগের ২০১৮১-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী পরমা পারমিতা, চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আছিয়া খাতুন ও উত্তরণ লেখক ও পাঠক সূতিকাগারের সাবেক সভাপতি ও ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আফরিন জাহান এবং ২০১৯-২০ সেশনের নুসরাত জাহান নুপুর। 

অন্যান্য সম্পাদকীয় পদে নারী প্রার্থী
এজিএস পদে আছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোটের জান্নাত আরা নওশিন (২০২১-২২) ও ছাত্রদল সমর্থিত জাহিন বিশ্বাস এষা (২০২০-২১), ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ছাত্রদল সমর্থিত নার্গিস খাতুন (২০১৯-২০)। 

সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আছেন সারাফ আনজুম বিভা (২০২১-২২), মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবিদা আক্তার লাবনী (২০২১-২২), ছাত্রদল মনোনীত মোছা. স্বপ্না আক্তার (২০১৮-১৯), শিবির সমর্থিত সাইয়িদা হাফছা (২০১৯-২০), মোছা. সুমাইয়া মুস্তারিন মুন (২০১৯-২০), হেমা আক্তার ইভা (২০১৮-১৯), সামসাদ জাহান (২০১৯-২০) ও মোছা. নিশা আক্তার (২০২০-২১)।

আরও পড়ুন: শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হলো না জাবি শিক্ষক জান্নাতুলের, বাড়িতে শোকের মাতম

সহকারী সম্পাদক (মহিলাবিষয়ক) পদে আছেন হাসনাহেনা বর্ষা (২০২০-২১), নুসরাত জাহান অহনা (২০২২-২৩), নাদিয়া হক (২০২২-২৩), জান্নাতুল ফেরদৌসি তৃষা জান্নাত (২০২০-২১), শ্রেয়সী রায় (২০২১-২২), শিবির মনোনীত সামিয়া জাহান (২০২০-২১), ফারহিন শবনম শায়ন্তি (২০২৪-২৫), নসরাত আফরিন (২০১৯-২০) এবং ছাত্রদল সমর্থিত নূসরাত ঈষিতা (২০১৯-২০)।

এ ছাড়া সহকারী সম্পাদক (পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোছা. ইশিথা পারভিন তিথি (২০২০-২১) ও শিবির সমর্থিত মাসুমা ইসরাত মুমু (২০২২-২৩)।

কার্যনির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তামান্না আক্তার (২০২২-২৩), মোছা. জান্নাতুন নাঈম তুহিনা (২০১৯-২০), ইউষা জান্নাত সোহা (২০২২-২৩), রেনেসা রাত্রী (২০২০-২১) ও তাহরিমা আক্তার (২০১৮-১৯)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ বলেন, এতসংখ্যক নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ কেবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বৈচিত্র্যময় করছে না, বরং বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে নারীর নেতৃত্ব, নীতি নির্ধারণে অংশগ্রহণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকা ক্রমশ শক্তিশালী করে তুলছে। নারী অংশগ্রহণের এই প্রবণতা রাজনীতিতে নারীদের নেতৃত্ব ও সক্রিয় ভূমিকা আরও সুদৃড় করবে বলে মনে করছি। 

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদল সমর্থিত নার্গিস খাতুন বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ও অনুন্নত অবস্থা কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছি। তাই নির্বাচিত হতে পারলে ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে বেশি বেশি টুর্নামেন্ট আয়োজন করব এবং বিশেষ করে মেয়েদের জিমনেশিয়ামের সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে চাই।

আরও পড়ুন: জাকসুর ফল দ্রুত প্রকাশের দাবিতে সিনেট ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

একই প্রশ্নের উত্তরে জিএস প্রার্থী নুসরাত জাহান নুপুর বলেন, রাকসু যেহেতু ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে পরিচালিত একটি গণতান্ত্রিক মঞ্চ, তাই শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমার লক্ষ্য হলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং ছাত্রবান্ধব পরিবেশে গড়ে তোলা।

সাইবার বুলিং প্রতিরোধ করা গেলে আরও মেয়ে প্রার্থী অংশগ্রহণ করতেন বলে মনে করেন ভিপি প্রার্থী তাসিন খান। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগেই সাইবার টিম গঠনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সাইবার বুলিংয়ের কারণে অনেক নারী শিক্ষার্থী আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি সাইবার টিম গঠন করলেও তাদের কার্যক্রম এখনো স্পষ্ট নয়। এতে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে, যা হতাশাজনক।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে আগামী এক বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করবেন।

রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‌‘এর আগে এত বিপুলসংখ্যক নারী শিক্ষার্থী প্রার্থী হওয়ার ঘটনা আছে বলে আমার জানা নেই। ১৯৮৯ সালে আমি রাকসু নির্বাচনের প্রার্থী ছিলাম। তখন নারী প্রার্থী খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। আমার মনে হচ্ছে এটাই রেকর্ডসংখ্যক নারী প্রার্থী হিসেবে রাকসু নির্বাচন করছেন।’


সর্বশেষ সংবাদ