সংগঠনের দখলে রাকসু ভবন, অস্তিত্ব নেই হল সংসদ কক্ষের
- মারুফ হোসেন মিশন, রাবি
- প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৫০ PM
৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। ইতোমধ্যে মনোনয়ন বিতরণ ও দাখিল শেষ হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীরাও উচ্ছ্বসিত। তবে রাকসু ও হল সংসদের অবকাঠামোর অবস্থা বেহাল থাকায় উঠছে নানা ধরনের প্রশ্ন। এমনকি হল সংসদের কোনও কক্ষের অস্তিত্বই নেই। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, সংস্কারের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে, খুব দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের পেছনে অবস্থিত রাকসু ভবনে কোনো নামফলকও নেই। ভেতরে জরাজীর্ণ অবস্থা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। সংস্কার করা হয়নি দীর্ঘদনি। ভবনটির কক্ষগুলো ব্যবহার করছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনে নামফলক না থাকায় অনেকটা পরিচয়হীন অবস্থায় রয়েছে। মাঝেমধ্যে ভবনের বাইরের অংশ রং করা হলেও কক্ষ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাকসু ভবনের বাইরে সংগঠনটির কোনো নামফলক নেই। তবে ভবনের দোতলায় রয়েছে কিছু পুরোনো ও অকেজো আসবাব। দ্বিতল ভবনে আছে সমকাল নাট্যচক্র, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ড্রামা অ্যাসোসিয়েশন, উদীচী সাংস্কৃতিক সংসদ ও অরণি সাংস্কৃতিক সংসদ। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় কার্যক্রম চালায় অনুশীলন নাট্যদল, তীর্থক নাটক, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি এডুকেশন ক্লাব, সাংস্কৃতিক জোট ও রিপোর্টার্স ইউনিটি। একটি কক্ষও খালি নেই ছাত্র সংসদের কার্যক্রম চালানোর জন্য।
রাকসু ভবনে কোনো নামফলকও নেই। ভবনের ভেতর জরাজীর্ণ অবস্থা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। সংস্কার করা হয়নি দীর্ঘদনি। ভবনটির কক্ষগুলো ব্যবহার করছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনে নামফলক না থাকায় পরিচয়হীন ভবনটি। মাঝমধ্যে ভবনের বাইরের অংশ রং করা হলেও কক্ষ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, যে রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে এত আমেজ, সেই রাকসু ভবনেরই বেহাল দশা। কক্ষে নেই চেয়ার, টেবিল কিংবা বসার জায়গা। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি রাকসু ভবন। ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছ। প্রশাসনের দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু করা উচিৎ।
রাকসু নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাসে উচ্ছ্বাস তৈরি হলেও রাকসু ভবনের নাজুক অবস্থা দেখে হতাশা প্রকাশ করেন আইন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মাজিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভবনের ভেতরে অনেক আসবাবপত্র পড়ে আছে অকেজো অবস্থায়। নামফলক না থাকায় বোঝার উপায় নেই, এটি রাকসুর মতো একটি ঐতিহাসিক ভবন। যে সংগঠন আগামী প্রজন্মের নেতৃত্ব গঠনের ক্ষেত্র তৈরি করবে, সেই সংগঠনের অফিসই নেই।’

‘জরাজীর্ণ আর অব্যবহৃত আসবাবপত্রে ভরা রাকসু ভবনের ভেতরের বারান্দা। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু হোক। ভবনের পরিচিতির জন্য নামফলক স্থাপন এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাজ পরিচালনার জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক। রাকসু ভবনে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। কক্ষগুলো রাকসুর কার্যক্রম করার পরিবেশ সৃষ্টি করে সংগঠনগুলোর পুনর্বাসন করা জরুরি’, যোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: হাতে গোনা হবে জাকসুর ভোট, ছাত্রদল-শিবিরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
রাকসু ভবনের বর্তমান অবস্থা ও নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কোথায় বসবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেতাউর রহমান বলেন, ‘রাকসু ভবন সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে থাকা সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই তা বাস্তবায়িত হবে। নির্বাচনী প্রস্তুতির ব্যস্ততার কারণে উদ্যোগগুলো আগে নেওয়া সম্ভব হয়নি। খুব শিগগিরই নামফলকসহ সংস্কার কাজ শেষ করা হবে।’
রাকসু নির্বাচনের পাশাপাশি আবাসিক হল সংসদের অবস্থাও করুণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের ১১ ও মেয়েদের ছয় হলে এখন কোনো ছাত্র সংসদ কক্ষের অস্তিত্ব নেই। অনেক হলে কক্ষগুলো পরিবর্তন করে ব্যবহার করা হচ্ছে পত্রিকা রুম বা রিডিং রুম হিসেবে।
বিজয়-২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘৩৫ বছর আগে রাকসু নির্বাচন হয়েছিল। অনেক হলে ছাত্র সংসদ কক্ষ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমি আমার বিজয়-২৪ হলে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। খুব শিগগিরই অন্যান্য হলেও প্রাধ্যক্ষরা সংস্কারের ব্যবস্থা নেবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, ‘রাকসু ভবনের নামফলক ও অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। সংগঠনগুলো কোথায় পুনর্বাসন করা যায়, তা খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন জমা দিলে আমরা কাজ শুরু করব। আশা করছি, দ্রুত নামফলক স্থাপন, সংস্কারকাজ এবং সংগঠনগুলোর পুনর্বাসন সম্পন্ন করা হবে।’