ডাকসু নির্বাচন

সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্নসহ ৬ প্রস্তাবনা ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংকের

সংবাদ সম্মেলন
সংবাদ সম্মেলন  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন (ডাকসু) নিয়ে ৬টি প্রস্তাবনা জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক (ইউটিএল)। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস।

তিনি বলেন, ডাকসুতে সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পুরোপুরি তৈরি হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আলাপ আলোচনা ছাড়া নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। কাদের স্বার্থে এ সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা জরুরি। দেশের অনেক কর্পোরেট মিডিয়া নির্দিষ্ট পক্ষের বক্তব্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছে, অন্যদের মতামত সেভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। এটি নির্বাচনের পরিবেশে ভারসাম্য নষ্ট করছে। কোনো কোনো প্রার্থীকে পরিকল্পিতভাবে হেনস্তা করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কমিশন এ নিয়ে কোনো সতর্কতা বার্তা দিচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামফোবিয়া বিরাজমান। ইসলামবিদ্বেষ একটি গভীর কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। জামালউদ্দিন খালিদদের মিডিয়ায় কাভারেজ না দেওয়া, সাবিকুন্নাহারের ছবি বিকৃতি করে প্রচার করা, কিংবা নিত্যদিনের কৌতুক, মিম ও হাস্য-বিদ্রূপের মাধ্যমে মুসলিম নারীদের হেয় করা। এগুলো শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর আঘাত নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতির জন্যও হুমকি।

এসময় সংগঠনটি ৬টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। প্রস্তাবনাগুলো হলো-

১. নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা
*ঘোষিত তারিখে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন *২০২৫ অনুষ্ঠিত করতে হবে।
*এই দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের।
*ফ্যাসিবাদের দোসর কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা যাবে না।
*আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষদের দায়িত্বশীলতা, নিরপেক্ষতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

২. নারী শিক্ষার্থীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা
*নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা, পোশাক নিয়ে ব্যাশিং, হিজাব নিয়ে কটূক্তি ও অনলাইন বুলিংয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
*ধর্ষণের হুমকিদাতা ও সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনানুগ শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
*ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

৩. নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
*ভোটকেন্দ্র ও বুথ সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
*প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ও বুথকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে।
*ভোটদানের সময় বৃদ্ধি করতে হবে।
*নির্ধারিত সময়ে লাইনে দাঁড়ানো সব শিক্ষার্থীর ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, যত সময়ই লাগুক না কেন।
*শিক্ষক, কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করতে হবে।
*ইউটিএল স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে এবং তা নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হবে।

৪. সবার জন্য সমান সুযোগ
*সকল ছাত্রসংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
*কোনো সংগঠন বা প্রার্থীকে আক্রমণের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করতে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
*ক্যাম্পাসে সহিংসতা ও দমননীতি কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে।
*ডাকসুকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধ না রেখে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।

৫. ন্যায়ভিত্তিক অংশগ্রহণ
*নির্বাচনী কমিটি, সিনেট ও সিন্ডিকেটে ডানপন্থী ও ইসলামীপন্থী শিক্ষকদের বাদ দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
*প্রশাসন কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের নামে নতুন ফ্যাসিবাদ কায়েমের প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।

৬. জবাবদিহিতা ও শাস্তি
*ফ্যাসিবাদী সময়ে শিক্ষার্থী নিপীড়নে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্রনেতাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
*নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ