চবিতে স্থানীয়দের হামলায় আহত শতাধিক শিক্ষার্থী, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৫, ০৭:১৯ AM , আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৫, ০২:৫১ PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে বাসার দারোয়ান কর্তৃক মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এরমধ্যে ২০ জন শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে (চমেক) পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির দুই শিক্ষকও আহত হয়েছেন।
শনিবার (৩০ আগস্ট) সাড়ে ১১টা থেকে ভোররাত ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় স্থানীয় এলাকাবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
আহতদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মো. টিপু সুলতান বলেন, আনুমানিক প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ৩-৪ ধাপে চমেকে ২৪জন শিক্ষার্থীকে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিচ্ছেন আমরা সব হিসেব করতে পারিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের সূত্রমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নং এলাকার একটি বাসায় ভুক্তভোগী ছাত্রী ভাড়া থাকেন। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করলে কেনো দেরিতে এসেছে তাই গেট খুলতে রাজি হয়না দারোয়ান। দীর্ঘক্ষণ চিৎকার-চেঁচামেচির পর একপর্যায়ে গেট খোলা হয়। এবং কেনো চেঁচামেচি করছে এজন্য ওই ছাত্রীকে থাপ্পড় মারেন দারোয়ান। পরে ওই ছাত্রী তার কয়েকজন সহপাঠীকে ফোন দিলে তারা আসে এবং দারোয়ানের ওপর চড়াও হন। তারা দারোয়ানকে আটকানোর চেষ্টা করলে সে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় খবরটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে আরও শিক্ষার্থী সেখানে জড়ো হন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা তাকে ধাওয়া করলে স্থানীয়রা একত্র হয়ে ইট–পাটকেল মারা শুরু করেন। তখন সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাফিয়া খাতুন বলেন, আমাদের বাসার গেট রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। আজকে কাজে বাইরে গিয়েছিলাম, ১১টার দিকে ফিরে এসে দেখি গেট বন্ধ। আমি অনেকবার ধাক্কা দিয়েছি, রুমমেটরা অনুরোধ করেছে, কিন্তু দারোয়ান খোলেনি। পরে গেট খুলে আমাকে উদ্দেশ্য করে খারাপ ব্যবহার করে এবং ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে দু’বার ধাক্কা দেয়। জোর করে ঢুকতে চাইলে সে আমাকে লাথি-থাপ্পড় মারে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক শিক্ষার্থী জানান, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। হামলার সময় বাচামিয়ার দোকানের সামনে শিক্ষার্থীরা গেলে ৩টা টর্চ লাইটের আলো ফেলে হামলা করা হয়। এসময় স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল।
ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের ২টি, নিরাপত্তার বাহিনীর ১ টি এবং প্রক্টরিয়াল বডির ১টি মোট ৪টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে স্থানীয়রা। ঘটনা সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সাহায্যের আবেদন করলে শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে পড়েন।
উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায় আমাদের ভাইয়েরা স্থানীয়দের হামলায় একের পর এক আহত হচ্ছে আর প্রশাসনের কেউ উপস্থিত না হয়ে ফেসবুকে সাহায্য চাইছেন! এটা কোন ধরণের প্রশাসন।
খবর পেয়ে শুরুতে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন। পরে রাত ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ভোর ৫টার দিকে সেনা কর্মকর্তা মেজর শাহরিয়ার বলেন, আমরা এখানে আসার পর আটকে থাকা ১০ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছি। ভেতরে আমাদের আরেক গ্রুপ রয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। সকালে আবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছেন। স্থানীয়দের হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।